মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভালো নেই নারী চা শ্রমিকরা

পঞ্চগড়ে মজুরি বৈষম্যে ১৫ হাজার নারী শ্রমিক

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

কাকডাকা ভোরে সংসারের সব কাজ গুছিয়ে চা বাগান অথবা চা কারখানায় ছুটে যেতে হয় পঞ্চগড়ের নারী চা শ্রমিকদের। কোলের বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে অথবা কারও কাছে রেখে সারাদিনের মতো কাজে বের হয়ে পড়েন এ নারীরা। রোদ, বৃষ্টি কিংবা কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে সারাদিন চা পাতা তোলা অথবা কারখানার বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। কিন্তু কম মজুরি আর মজুরি বৈষম্যের শিকার এই নারী শ্রমিকরা। শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে করতোয়া চা বাগান। এই বাগানের নারী শ্রমিকরা বেশির ভাগই সাঁওতাল উপজাতীয়। পঞ্চগড়ের চা বাগান ও কারখানাগুলোতে স্থানীয় নারী শ্রমিকরাও রয়েছেন নানা সংকটে। মাত্র দুই দশক আগেও বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করে সংসারে আয় বাড়াবেন এমনটা চিন্তাই করতে পারতেন না এসব নারী। ১৯৯৮ সালে শুরু হয়ে মাত্র কয়েক বছরে সমতল ভূমিতে চা চাষে বিপ্লব ঘটে যায় এই জেলায়। বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পাশাপাশি নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে বড় আকারের চা বাগান (টি স্টেট) রয়েছে ১৬টি। সঙ্গে স্থানীয় চাষিদের উদ্যোগে আরও দুই সহস্রাধিক ক্ষুুদ্র ও মাঝারি আকারের চা বাগান গড়ে উঠেছে। এসব চা বাগানে প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন। অন্যদিকে ১২টির মতো চা কারখানায় কাজ করছেন আরও দুই সহস্রাধিক নারী শ্রমিক। এই নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই বিধবা, বয়স্ক, দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা গৃহিণী অথবা কিশোরী।  নারী শ্রমিকরা জানিয়েছেন সারাদিনের মজুরির টাকা দিয়ে তারা বর্তমান বাজার দরে ২ কেজি চালও কিনতে পারছেন না। চা বাগানে আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে ৪৬ কেজি পাতা তুলে পুরুষরা যেখানে ২০০ টাকা আয় করেন সেখানে একই পরিশ্রম করে নারীদের দেওয়া হয় মাত্র ১০৫ টাকা। ৪৬ কেজির কম পাতা তুললে নারীদের শুনতে হয় গালাগাল। কাজ থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে চা কারখানায় ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে নারীদের দেওয়া হয় ২৬২ টাকা।

 

 একই সময়ে একই পরিশ্রম করে পুরুষরা পান ৩০০ টাকা। তাই মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি পুরুষদের সমান মজুরি দাবি করেছেন এই জেলার নারী চা শ্রমিকরা। সদর উপজেলার নুনিযাপাড়া গ্রামের নারী চা  শ্রমিক মোমেনা বেগম (৬৮) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘৫ বছর আগতে বিধবা হইছু। প্রতিবন্ধী একটা ছুয়াক লে মোর সংসার। বহু কষ্টে মেয়ের বেহা (বিয়ে) দিছু। চা মেশিনত আর বাগানত কাজ করে প্রতিদিন মজুরি পাছু দুশো টাকা। এই টাকায় চাল হয় কিন্তু তরিতরকারি হয় না। নাস্তা পাতি হয় না। শাড়ি-কাপড় হয় না। খুব কষ্টে আছি হামরা। কাহাকো কহা যায় না সহাও যায় না।’ তবে এ ব্যাপারে চা বাগানের মালিক কিংবা কারখানা মালিক, ম্যানেজার কেউই কথা বলতে রাজি হননি। পঞ্চগড় জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রুখসানা মমতাজ মজুরি বৈষম্যকে দুঃখজনক উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চা বাগান বা কারখানায় নারী শ্রমিকদের অতি সামান্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এটা অমানবিক।

ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর