সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দশম সংসদের চার বছর আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ বছর মেয়াদি আইনসভার চার বছর পূর্ণ করল আজ। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে দশম জাতীয় সংসদ। এই সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।

দশম সংসদ এ পর্যন্ত ১২৮টি আইন পাস করেছে। এ ছাড়া ১৪৭ বিধির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

 প্রসঙ্গত, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংসদের ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সংসদে না থেকেও প্রায় প্রতিটি অধিবেশনে সংসদের বৈঠকে আলোচনায় ছিল দলটি। চলমান ১৯তম অধিবেশনেও সংসদে ওই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ তাদের পরিবারের ১৫৫ পাতার দুর্নীতির ফিরিস্তি দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংসদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।  তিনি বলেন, পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত এই সংসদ এরই মধ্যে ৪ বছর পার করেছে। দশম জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় একটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এই সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল সমভাবে সক্রিয় থেকেছে। তারা রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে সংসদকে কার্যকর রেখেছে। যে কারণে এই সংসদ বিশ্বের সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে। স্পিকার আরও বলেন, বিগত চার বছরে বিরোধী দল প্রতিটি অধিবেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। কোনো কোনো ইস্যুতে তারা ওয়াক-আউট করেছে। এই ওয়াকআউট সংসদীয় রীতির মধ্যে একটি বিষয়। তারা যখন কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতে চেয়েছে, তখনই তারা ওয়াকআউট করেছে।

এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি সুস্থ ধারার রাজনীতি ও দেশের স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। সে জন্য জাতীয় সংসদের ভিতরে ও বাইরে কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দলটি ভূমিকা রেখেছে এই দলটি। বিগত চার বছরে সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি পাল্টে দিয়েছে। সংসদকে গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়নার মতো। সরকার যখন কোনোক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয়, বিরোধী দল তখন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে সেই ভুমিকায় পালন করছে। জনগণের স্বার্থে সংসদে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। রওশন এরশাদ বলেন, ১৯৯১ সালের পর  থেকে শুরু করে নবম সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি সংসদেই বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থেকেছে বিরোধী দল। কথায় কথায় ওয়াকআউট ও বর্জন করেছে। ফাইল ছোড়াছুড়ি করেছে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করেছে। সরকারের উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিরোধী দলের কাছ থেকে কোনো ভালো কাজে সহযোগিতা পায়নি সরকার। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ছায়া সরকার হিসেবে বর্তমান বিরোধী দল জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সংসদে কথা বলছে। আমি নিজেও প্রতিটি বক্তব্যে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। আর আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সদস্যরা বিভিন্ন সংশোধনী ও পর্যালোচনামূলক ভূমিকা রাখছেন। কোনো কোনো ইস্যুতে বিতর্কও করছে। যা ছিল জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। যেমন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। 

সংসদ সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বিগত চার বছরের ১৯ অধিবেশনে সংসদে বৈঠক বসেছে মোট ৩৪২ দিন। নতুন আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান আইন সংশোধনে এই সময়ে মোট ১২৯ বিল পাস করা হয়েছে। একই সময়ে সর্বসম্মতভাবে ১৪টি প্রস্তাব করা হয়েছে। গত নভেম্বরে শেষ হওয়া ১৮তম অধিবেশন অবধি সংসদে উত্থাপিত ৯১৫ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা দিয়েছেন আরও ৩৩ হাজার ৪৩৩ প্রশ্নের জবাব। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের মধ্য দিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় শীতকালীন এ অধিবেশন। চলতি অধিবেশনে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল চারটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ ক্ষণ। একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিধিমালা অনুযায়ী ভোট হবে। একক প্রার্থী হলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর