সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান কাল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাল থেকে (২৭ মার্চ) শুরু হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। এ জন্য প্রস্তুত রয়েছে দুদকের আর্মড ইউনিট। এর আগেও প্রধান কার্যালয়ের অভিযোগ কেন্দ্রে হটলাইন সেবা ১০৬-এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধে তাত্ক্ষণিকভাবে অভিযান শুরু করেছিল দুদক। এবারের অভিযান পরিচালিত হবে নতুন পরিকল্পনায়। দুর্নীতির প্রমাণ পেলেই হাতেনাতে গ্রেফতার করা হবে অভিযুক্তকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাল থেকে কল সেন্টারে অভিযোগ পেলেই দুদক কর্মকতারা সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হবেন। অভিযান পরিচালনার জন্য কমিশন কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।

এ অভিযান আপাতত রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার অফিসে ঘুষ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে। জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচাললক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যশোরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক উপপরিচালককে ঘুষ গ্রহণকালে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গত ১৩ জানুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মহাহিসাব নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারি সব অধিদফতর ও পরিদফতরের আর্থিক অডিট আপত্তি ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে মতবিনিময় করেন। দুদকের  টিমের হাতে গত বছর অন্তত ৩১ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম ফখরুল ইসলামও ছিলেন।

এ ছাড়া দুদক চেয়ারম্যান সব অডিট আপত্তি খতিয়ে দেখার জন্য আর্থিক প্রতিবেদন দুদকে প্রেরণের একটি প্রস্তাবনা পেশ করেছেন সিএজির কাছে। এরপর ১৪ জানুয়ারি দুদকের একটি টিম যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। গতকাল অপর একটি টিম যায়-রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে। তারা সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দুদক ডিজি মুনীর চৌধুরী বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেই অভিযান চলবে। সামনে এ অভিযানের মাত্রা ও আওতা আরও বাড়ানো হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে হটলাইন আজ থেকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।

দুদক জানায়, তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর  চৌধুরী। সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট নিয়ে এসব অভিযানে নামে দুদক। এর আগেও হটলাইনের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কারাগারের এক কর্মচারী তার কাছে ঘুষ দাবি করে। বিষয়টি দুদকের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। টিমের সদস্যরা দুদকের সশস্ত্র পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। তারা উপস্থিত আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আগত স্বজনদের সঙ্গে ঘুষ এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে কথা বলেন। জনৈক ব্যক্তি সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার নামে ৫০০ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। টাকা না থাকায় তিনি বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এরপর দুদক টিমের সদস্যরা বিভিন্ন সাক্ষাৎ প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তারা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান। ডেপুটি জেলার জানান, তাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। এর আগে গত ১০ জানুয়ারিতে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন চলছে অভিযোগ পেয়ে কারওয়ান বাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। অভিযান পরিচালনাকালে অফিসের প্রতিটি ফ্লোরে সিসি টিভি সার্ভিস চালু রাখার অনুরোধ জানানো হয়। একজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কার্যালয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুষ-লেনদেন চলছে। এর আগে ঢাকার জিপিওতে বৈদেশিক পার্সেল প্রেরণের কার্যক্রমে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হচ্ছে। এরপর দুদকের দুজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সশস্ত্র পুলিশ ফোর্সসহ একটি এনফোর্সমেন্ট টিম তাত্ক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে। এরপর অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়। সেবা প্রদানে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা জেনে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের পরামর্শ প্রদান করেন। এ ছাড়াও একইভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মালামাল বিক্রির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে জেনে তাত্ক্ষণিকভাবে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম হাজির হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সর্বশেষ খবর