শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডি আজ স্মৃতি মনে হলে আজও আঁতকে উঠেন স্বজনরা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ঈদ শেষে কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার পথে পদ্মা নদীতে প্রায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চটি। এতে মারা যায় অনেক যাত্রী। সেসব মৃতযাত্রীর স্বজনরা আজও পিনাক-৬ এর নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। তারা আজও ভুলতে পারেননি স্বজন হারানো স্মৃতি। কাওড়াকান্দি ঘাট ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে এইদিনে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছিল মানুষ। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় পিনাক-৬। ওভারলোডিংয়ের কারণে পদ্মায় ডুবে যায় লঞ্চটি। সরকারিভাবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ এবং বেসরকারি হিসেবে ৮৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। জীবিত কিছু উদ্ধার হয় বিভিন্ন উপায়ে। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন।

যাদের হদিস আজও মেলেনি।

শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর গ্রামের মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী রোকসানা, দুই সন্তান— মিলি ও মইন ঈদ করেই ঢাকা যাওয়ার সময় পিনাক-৬ ডুবিতে মারা যায়। এমনই আরেক পরিবার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীচর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে ফরহাদ মাতুব্বর ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একই দুর্ঘটনায় মারা যান। স্ত্রী শিল্পী, এক বছর বয়সী সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালও মারা যায়। যাদের লাশ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই স্বজন হারানো পরিবার চোখের জল ফেলছে।

শিবচর উপজেলার কাদিরপুরের মেধাবী দুই বোনসহ এক খালাতো বোনের মৃত্যু হয়েছে। একই পরিবারের দুই মেয়েকে হারিয়ে আজও পাগলপ্রায় তাদের বাবা-মাসহ আত্মীয়-স্বজন। বড় বোন নুসরাত জাহান হিরা (২০) ঢাকার শিকদার মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। অপর বোন ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা (১৮) ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ পাবলিক কলেজে পড়ত। তাদের খালাতো বোন জান্নাত নাঈম লাকীকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। লঞ্চডুবির পর বাবা বেঁচে গেলেও তিন বোন বাঁচতে পারেনি। শিবচরে এমন আরও ১২-১৪টি পরিবারেও রয়েছে স্বজন হারানো বেদনা।

এছাড়াও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাসীকান্দি গ্রামের হায়দার চৌকিদারের মেয়ে ইমা আক্তারসহ (১৮) পরিবারের অন্য সদস্যদের হারানো শোক আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ওই পরিবারের স্বজনরা। কালকিনির ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবুজ কাজী তার মা হিরোন নেছা (৬৫), স্ত্রী ময়না আক্তার তৃষা (২৫), ছেলে তৌফিকুর নূর (১), স্ত্রীর ভাই আল-আমিনকে (৩০) হারিয়েছেন। আজও তিনি সবচেয়ে আপনজনদের হারানোর শোক ভুলতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর