রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বগুড়ায় তৈরি ডিজিটাল ওজন স্কেল যাবে চীন-ভারতে

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

সনাতন পদ্ধতির দাঁড়িপাল্লা ও বাটখারার পরিবর্তে এখন ডিজিটাল ওজন মাপক যন্ত্র (স্কেল) ব্যবহার বেড়েছে সারা দেশে। সোনার ওজন থেকে শুরু করে মুদি, সবজি, মাছ, মাংস, রড, সিমেন্টসহ বড়বড় জিনিসপত্রের ওজন মাপার জন্যও ডিজিটাল ওজন স্কেল ব্যবহার হচ্ছে। এতদিন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি স্কেলেই মিটানো হতো চাহিদা। বগুড়ার শোভা এ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের তৈরি সুমো ডিজিটাল ওজন স্কেল সাড়া জাগিয়েছে। বগুড়া ও আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে সুমো ডিজিটাল ওজন স্কেল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। চলছে বিদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া। সব ঠিক থাকলে শিগগিরই চীন ও ভারতে রপ্তানি করা হবে।  বিদেশি স্কেলের চেয়ে দাম কম ও মান ভালো হওয়ায় সুমো ডিজিটাল ওজন স্কেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।

সরেজমিনে শোভা এ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ শ্রমিক এক সঙ্গে কাজ করছেন। লোহা ও স্টিলের পাত কাটার জন্য রয়েছে আলাদা শ্রমিক। স্কেলের লোড সেল ও সার্কিট তৈরি করছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা প্রকৌশলীরা। ভিন্ন ভিন্ন আকারের স্কেলের দামেও  রয়েছে ভিন্নতা। ৩০০ থেকে শুরু করে লাখ টাকা মূল্যের জেস স্কেলও তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে মেসার্স শোভা এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানটির পথ চলা শুরু হয়। প্রথমে কার্টুন, প্রিন্টিং, এ্যাডহোসিভ টেপ, বান্ডিং টেপ ও ব্যাটারি তৈরি করতো। ২০০৯ সালে বগুড়া শহরের স্টাফ কোয়ার্টার লেনের মালতীনগরে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে শোভা এ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেড কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই কারখানায় সুমো ডিজিটাল স্কেল তৈরি করা হচ্ছে। এটি বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, নাটোর, ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ দেশের প্রায় জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় রয়েছে বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রকৌশলী। রয়েছে ক্রেতাদের সুবিধা দিতে কল সেন্টার। কল সেন্টারে নারী কর্মীর সংখ্যাই বেশি। তবে নেই কোনো শিশু শ্রমিক।

শোভা এ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী শাহীন হোসাইন জানান, মোট প্রকৌশলী রয়েছে ১৯ জন। আর সারা দেশে রয়েছে আরও ৯৬ জন। স্থায়ী শ্রমিক অর্ধশত। ৪৮৫টি উপাদান দিয়ে একটি ওজন স্কেল তৈরি হয়ে থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইর নীতিমালা অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে কারখানাটি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি ওজন স্কেল তৈরি হয়। প্রয়োজন অনুসারে সব কিছু ওজন করার জন্য তারা ওজন স্কেল তৈরি করতে সক্ষম। সোনা থেকে শুরু করে ভারী জিনিসপত্র মাপার জন্য প্রয়োজনীয় ওজন স্কেল তৈরি করে থাকেন। সক্ষমতা রয়েছে ২১০ মেট্রিক টন ওজন স্কেল তৈরির।

বগুড়ার সুমো ডিজিটাল ওজন স্কেল তৈরির প্রতিষ্ঠান শোভা এ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আহম্মেদ কিরন জানান, বিএসটিআইর সহযোগিতায় প্রতিটি মেশিন ক্যালিব্রেশন শেষে বাজারজাত করা হয়। ভারত থেকে লোডসেল ও কিছু সরঞ্জাম ছাড়া সব কিছুই দেশীয় প্রযুক্তিতে স্কেল তৈরি হচ্ছে। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও তাদের তৈরি বড় বড় ওজন স্কেল ব্যবহার হচ্ছে। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় দিলে যে কোনো ধরনের স্কেল তৈরি করার মতো জনবল রয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দিলে ডিজিটাল ওজন স্কেলের আরও বিস্তৃতি হবে। চীন ও ভারতের কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সব ঠিক থাকলে শিগগিরই রপ্তানি করা হবে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু স্কেল হাতে হাতে বিদেশের বাজারে দেওয়া হয়েছে। বাজার যাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে চীনেও ।

সর্বশেষ খবর