শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা

সেবাগ্রহীতা খুশি সরকারি সেবায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি এনজিওর কর্মকর্তা ফারহানা নাজনিন। দুই সপ্তাহ পরই প্রাতিষ্ঠানিক কাজে তার থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিমানের টিকিট বুকিং দিতে গিয়ে দেখলেন তার পাসপোর্টের মেয়াদ নেই। চিন্তায় পড়ে গেলেন। পত্রিকা পড়ে জানতে পারলেন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় উন্নয়ন মেলায় স্বল্পসময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট নবায়ন করা যাচ্ছে। দেরি না করে ছুটে গেলেন রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণের জাতীয় উন্নয়ন মেলা, ২০১৮-তে। গতকাল সরকারি ছুটির দিন বিকালে এই এনজিও কর্মকর্তা নিজের পাসপোর্টটির মেয়াদ বৃদ্ধি করার সুযোগ পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উন্নয়ন মেলা এ মুহূর্তে আমাকে বড় বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। কোনো ঝামেলা ছাড়া মাত্র ছয় ঘণ্টায় যে পাসপোর্ট নবায়ন করা যায়, তা ছিল আমার ধারণার বাইরে।’ ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা। আজ মেলার শেষ দিন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে ধরতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ছুটির দিনে হওয়ায় গতকাল মেলায় সকাল থেকে দর্শক ভিড় জমাতে থাকেন। তবে বিকালের দিকে দর্শক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছোট শিশুরা অভিভাবকদের সঙ্গে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে মেলায় যান। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিই বলে দিয়েছে এ মেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। মেলায় আগত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আরাফাত সানি বলেন, উন্নয়ন মেলায় না এলে সরকারি এত সেবা সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। মেলায় একটি স্টল দূর থেকেই দর্শকদের আকর্ষণ করে। দেখে মনে হয় এটি বুঝি নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর একটি অংশ। আসলে এটি উন্নয়ন মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টল। পদ্মা সেতুর স্প্যানের আদলে সাজানো হয়েছে স্টলের ওপরের অংশ। আগ্রহীদের অনেকেই মনোমুগ্ধকর এই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলেছেন। এ স্টলে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হচ্ছে। আগ্রহী দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন স্টলে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনী ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীর স্টলে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ফায়ার অ্যান্ড সিভিল সার্ভিসের স্টলে গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের আধুনিক উদ্ধার যন্ত্রপাতি প্রদর্শিত হচ্ছে। একইসঙ্গে স্টলে থাকা বিভিন্ন লিফলেট ও টিভি মনিটরে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নিজেদের সক্ষমতা দর্শকদের সামনে তুলে ধরছেন। এ ছাড়া মেলায় বঙ্গবন্ধু আর্কাইভে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঐতিহাসিক ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। সেই ছবিগুলো দেখতে স্টলে সব বয়সী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত বই দেখছিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার আদর্শ। আর বইগুলো হাতে নিয়ে দেখতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে।

সরকারের বিভিন্ন দফতরের পক্ষ থেকেও মেলায় সহজ ও ঝামেলামুক্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি যেসব দফতর বা সংস্থার বই বা সচিত্র প্রকাশনা আছে মেলায় সেগুলো বিনামূল্যে দর্শকদের কাছে বিতরণ বা বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাফল্য, তথ্যপ্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ বিদ্যুতের অন্য মেগা প্রকল্পের হালনাগাদ তথ্য লিখিত ও ভিডিও মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে।

মেলায় সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন আর্থিক-আইনি প্রতিষ্ঠান, পরিকল্পনা, ত্রাণ, খাদ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, বন ও পরিবেশ, বস্ত্র ও পাটসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর মানুষকে বিভিন্ন সেবা প্রদানের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছে। মেলায় মোট ৩৩০টি স্টল অংশ নিয়েছে। তিন দিনের মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর