রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সুস্বাদু কুমড়া বড়ি যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে চাটাইয়ের ওপর শুকানো হচ্ছে মাসকালাইয়ের সুস্বাদু কুমড়া বড়ি। পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে এই বড়ি তৈরি করছে। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষই এই বড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এটি তাদের পূর্ব পুরুষের ব্যবসা। সবুজে ঘেরা গ্রামটি খট্টেশ্বর। এ গ্রামটি কুমড়া বড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এখানকার কুমড়া বড়ির বিশেষত হচ্ছে এ বড়ির স্বাদ অন্যান্য এলাকার বড়ির চেয়ে আলাদা ও ভিন্নধর্মী। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই গ্রামের বড়ি পাইকারি নিয়ে যায়। বর্তমানে ওই গ্রামের কুমড়া বড়ির কারিগররা বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত মৌসুমে বড়ির চাহিদা বেশি থাকায় বড়ি তৈরি নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। অর্ধেক রাত থেকে শুরু হয় এই বড়ি তৈরির কাজ। এই গ্রামেই বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয় কুমড়া বড়ি। উপজেলার নিজস্ব ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার হলো এই মাসকালাইয়ের কুমড়া বড়ি। এটি শীত মৌসুমের একটি বিশেষ খাবার।

শীতের ছয় মাসই মূলত এই বড়িটি তৈরি করা হয়ে থাকে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। রয়েছে অধিক মানের পুষ্টি। বড়ি তৈরির সব উপকরণই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার পণ্য। তাই এই বড়িতে ভেজাল বলে কিছুই নেই। শীত মৌসুমে যে কোনো তরকারিতে এই কুমড়া বড়ি যোগ করে আলাদা একটি স্বাদ। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে শুধু রানীনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের হাতেগোনা কয়েকটি গ্রামে শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়া বড়ি তৈরি হয়ে আসছে।

আবুল হোসেন, রহিম শেখসহ আরও অনেকেই বলেন, বড়ি মূলত মাসকালাই, চাল কুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা (বড় আকারের) এবং ১৫০-২০০ টাকা (ছোট আকারের) করে খুচরা-পাইকারি বিক্রয় করা হয়। এলাকার প্রয়োজন মিটিয়ে লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বড়িগুলো সরবরাহ করা হয়। খট্টেশ্বর গ্রামের অনেকেই জানান, সারা দেশেই এই গ্রামের কুমড়া বড়ির সুনাম রয়েছে। অনেক দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এই গ্রামের কুমড়া বড়ি নিয়ে যায়। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায় না। সরকার ইচ্ছা করলে এই বড়ি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারে। এতে এই শিল্পটি আরও প্রসারিত হতো।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, উপজেলার একমাত্র এই গ্রামটিতেই বাণিজ্যিকভাবে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই সুস্বাদু মাসকালাইয়ের কুমড়া বড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে সরকারিভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে ভবিষ্যতে এই শিল্পটি আরও প্রসারিত হতো।

সর্বশেষ খবর