বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি রেলওয়ে কোচ চলতি সপ্তাহে আসছে

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চলতি সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া থেকে রেলওয়ের জন্য ১৫টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ আসছে। ওই দেশ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মোট ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়েছে। প্রথম চালানে ১৫টি, দ্বিতীয় চালানে ১৮টি, তৃতীয় চালানে ১৭টি ব্রডগেজ কোচ মার্চের মধ্যে রেলওয়েতে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২০০টি মিটারগেজ কোচও জুনে আসতে শুরু করবে। আসবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এসব এসে গেলে রেলের কোচ সংকট কমে যাবে। এগুলো দিয়ে নতুন একাধিক ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, রেলওয়ের চলমান প্রকল্পগুলো, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন ক্রয়, চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা ইত্যাদির কঠোর মনিটরিং চলছে। তিনি এসব কাজে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। রেলের কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণসহ অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতেও নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী। বাংলাদেশ রেলওয়ে জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পের অধীনে ইন্দোনেশিয়ার রেলকোচ নির্মাতা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিটিইনকা থেকে কোচগুলো কিনে আনা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে প্রথম চালানের ১৫টি কোচ আসবে। কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিআরবিতে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় সভাও করেছেন। কোচগুলো আসার পর কী কী করণীয় সভায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ও রেলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (উন্নয়ন) হারুন-অর-রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে রেলের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বেড়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি কোচ ও ইঞ্জিন সংকটও কমে আসছে। নতুন নতুন কোচ ও ইঞ্জিন কেনা হলে ট্রেন চলাচলে আরও নতুনত্বও আসবে। তা ছাড়া চলতি মাসের শেষের দিকে প্রকল্পের অধীনে নতুন কোচ বাংলাদেশে আসছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে কেনা কোচগুলো প্রতি মাসেই বিভিন্ন লটে বাংলাদেশে আসবে। আগামী বছরের মে মাসের মধ্যেই সব কোচ রেলের বহরে যুক্ত হবে। ব্রডগেজ ও মিটারগেজ ২৫০টি কোচ এলে বাংলাদেশ রেলওয়ে আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, ৫০টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজের মধ্যে থাকবে প্রথম শ্রেণির এসি স্লিপার কোচ ৪টি, এসি চেয়ার কোচ ৮টি, শোভন চেয়ার কোচ ২৫টি, খাবার গাড়ি (গার্ডব্রেকসহ) ৮টি, পাওয়ার কার (নামাজ ঘরসহ) ৫টি। মোট ৫০টি ব্রডগেজ প্রথম চালানে পর্যায়ক্রমে আসবে। সূত্র জানান, কোচ তৈরির কাজ শেষ হলে প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ২১ নভেম্বর পিটিইনকার কারখানায় গিয়ে সেগুলো পরিদর্শন করেন। আট দিনের ওই সফরে বিভিন্ন টাইপের কোচের নকশা ও প্রস্তুতকৃত একটি করে কোচ পরীক্ষা করে দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্ডার দেওয়ার সময় যে ধরনের সুবিধা চাওয়া হয়েছিল সেভাবেই কোচগুলো তৈরি হচ্ছে কিনা পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন প্রদানের পরই বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য বাণিজ্যিকভাবে কোচ তৈরির কাজ শুরু করে কোম্পানিটি। শুরুতে সর্বশেষ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫টি এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রডগেজ কোচগুলো আসার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় ইন্দোনেশীয় কোম্পানিটি এক মাস বিলম্বে সরবরাহ শুরু করছে। ২৫০ কোচ আমদানিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) দিচ্ছে ১ হাজার কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করছে ৩৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কোচ আমদানিতে রেলওয়ের লাগছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। আমদানির বহরে থাকা ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচের রেক সাজাতে এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব দিয়েছে রেলের পরিবহন বিভাগ। পূর্বতন কোচগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এমজি কোচগুলো আমদানি করায় পূর্বাঞ্চল রেলের বেশকিছু আন্তনগর ট্রেনে নতুন কোচ সংযোজনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এর মধ্যে বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপকূল, সুবর্ণ, চট্টলা, যমুনা, উপবন, জয়ন্তিকা নতুন কোচ দিয়ে সাজানো হবে। বর্তমানে চট্টলাসহ রেলের বেশ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন দ্বিতীয় শ্রেণির কোচ দিয়ে চলাচল করে। চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট রুটের ট্রেনগুলোর কোচও পুরনো। নতুন কেনা কোচ পুরনোগুলোর স্থান নেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর