নিরপরাধ জাহালমের কারাভোগের ব্যাপারে দুকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুদক কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা ২১ আগস্টের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে হাই কোর্ট। এ ঘটনায় দুদক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়ী করে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এর আগে টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক নিরাপরাধ জাহালমের কারাভোগের জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের দায়ী করে গত ১১ জুলাই হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করার ভুলটি হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণে। আর দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ভুল পথে চালিত করতে ভূমিকা রেখেছেন ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের (ব্যাংক হিসাব) ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয়দানকারীরা। তবে সঠিক ঘটনা তথা সত্য উদ্ঘাটন করে আদালতের নিকট উপস্থাপন করাটাই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর বা অন্য কারও ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করার কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে হাই কোর্ট প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশংসা করলেও দুদক ব্যর্থ বলে মন্তব্য করে। আদালত বলে, জালিয়াতি করে ১৮ কোটি টাকা নিয়ে গেল, কিন্তু সেই টাকা কোথায়, সেটা বের করতে পারলেন না। এটা তো তদন্তেরই অংশ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাহায্য নিতে পারতেন। তাদের তো লজিস্টিক সাপোর্ট ছিল। তারা বলতে পারবে টাকা কোথায় গেছে। আপনি (দুদক) তো হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সেই আবু সালেককে গ্রেফতার করতে পেরেছেন?সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। এ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন হাই কোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। পরে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই দিনই মুক্তির নির্দেশ দেয়।