মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জেএমবির আমিরসহ তিনজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিষিদ্ধ জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নতুন আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আবদুল হাদিসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- হাবিবুর রহমান ওরফে চান মিয়া ও রাজীবুর রহমান ওরফে রাজীব ওরফে সাগর। এরা পার্বত্য এলাকায় জমি কিনে মাদ্রাসা বানিয়ে জঙ্গিঘাঁটি তৈরি করে সেখানে এই নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মী সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কর্মকা- পরিচালনা করে আসছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে গ্রেফতার এ তিন জঙ্গিকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, রাজধানী থেকে পার্বত্য এলাকায় যাচ্ছিলেন এই জঙ্গিরা। রবিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর ভাটারার সাইদনগর থেকে আমির আবু রায়হানকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অন্যদের।

মনিরুল বলেন, জেএমবি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্বে ছিলেন সালাউদ্দীন সালেহীন। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আমিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন খোরশেদ আলম জিয়া। বগুড়া জেলা পুলিশের হাতে খোরশেদ মারা যাওয়ার পর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এই আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আবদুল হাদী। তিনি আমির হওয়ার পর সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কর্মী রিক্রুটিং ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেন। এজন্য পার্বত্য জেলার কক্সবাজারে জমি কিনে মাদ্রাসা তৈরি করেন। সেখানে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার দুই সহযোগী জেএমবি নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেলজাতীয় বিস্ফোরক। প্রশিক্ষণের কাজে এগুলো ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবু রায়হান টঙ্গীতে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়াকালে ২০১০ সালে পুলিশের হাতে নিহত জঙ্গি তালহা ওরফে মারজান ও ডা. নজরুল ইসলামের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন। সংগঠনের প্রতি একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারের একটি মাদ্রাসায় গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার ‘দায়ি’র (শাখাপ্রধান) দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতার হওয়া আবু রায়হান আরেক জঙ্গি খোকনের চাচাতো শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। সে সময় তালহা ওরফে মারজান প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এক ব্যাগ কমান্ডো ছুরি আবু রায়হানের কাছে সরবরাহ করেন। আবু রায়হান সেই ছুরির ব্যাগ সরবরাহ করেন কক্সবাজারের নুরুল হাকিম ওরফে আবদুল হাকিমের কাছে। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আবু রায়হানের সরবরাহ করা ছুরিগুলোর ৩০টি ও কিছু বিস্ফোরক শাহজাহানপুর থেকে নুরুল হাকিম ওরফে আবদুল হাকিমসহ আরও কয়েকজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।

মনিরুল বলেন, ‘চান মিয়া জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করেন। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রাজধানীর দক্ষিণখান থানার এক পীরের বাসায় ডাকাতির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পুনরায় জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন চান মিয়া। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে শাহজাহান বাচ্চু হত্যাকান্ডেও তার সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। জেএমবির অন্য নেতা রাজীবুর রহমান ওরফে রাজীব ওরফে সাগরের বাড়ি ঢাকার বাইরে। সেই বাড়িতে জেএমবির নেতারা গোপন বৈঠক করতেন বলে জানতে পেরেছি।’

পুরনো জেএমবি নেতাদের কাছ থেকে আগেও কমান্ডো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছিল জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, পলাতক জেএমবি নেতা সালেহীন এই আবু রায়হানের বোনকে বিয়ে করেছেন। সেই সূত্রে তাদের মধ্যে ওয়ান টু ওয়ান যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। জেএমবির সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনার জন্য এখনো শায়খ আবদুর রহমানের এক আত্মীয় বিদেশ থেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মনিরুল বলেন, জেএমবি যদিও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, এর পরও তাদের কিছু পুরনো লোকজন রয়েছেন, যারা বোমা তৈরিতে পারদর্শী। এ তিনজনকে গ্রেফতারের পর জানার চেষ্টা চলছে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না।

সিটিটিসির অন্য এক কর্মকর্তা জানান, শায়খ আবদুর রহমানের এই আত্মীয়র নাম আবদুর রাকিব, যিনি সৌদি আরবের মদিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি কিছুদিন আগে দেশে এসেছিলেন। বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। পুরনো জেএমবির সব অর্থ তার মাধ্যমেই আসছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এদিকে গ্রেফতার এই তিনজনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক এস এম রাইসুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।

সর্বশেষ খবর