বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বিবিসিকে ভুক্তভোগীরা

উইঘুরে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে

প্রতিদিন ডেস্ক

চীনের জিনজিয়ান অঞ্চলে কথিত ‘পুনঃশিক্ষণ’ শিবিরে সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের নারীরা পদ্ধতিগত ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যের বরাত দিয়ে গতকাল বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, উইঘুর বন্দীশিবিরে নারীরা যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাঁরা ‘পদ্ধতিগত’ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। বিবিসিকে এক ভুক্তভোগী বলেছেন, চীনা কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হলো, উইঘুরদের সবাইকে শেষ করে দেওয়া। ভুক্তভোগীর মধ্যে জিনজিয়ান অঞ্চলের শিবিরে নয় মাস বন্দী ছিলেন তুরসুনাই জিয়াউদুন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শিবির থেকে ছাড়া পান তিনি। পরে জিনজিয়ান থেকে পালান জিয়াউদুন। তিনি প্রথমে কাজাখস্তানে যান। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জিয়াউদুনের ভাষ্য, শিবিরে করোনার প্রাদুর্ভাব নেই। তবু শিবিরের দায়িত্ব থাকা পুরুষেরা সব সময় মাস্ক পরে থাকেন। তাঁরা স্যুট পরেন। তবে তাঁদের পরনে থাকা সেই স্যুট ঠিক পুলিশের উর্দির মতো নয়।

জিয়াউদুন বলেন, ওই পুরুষেরা কখনো কখনো মধ্যরাতের পর শিবিরের সেলে আসেন। তাঁরা সেলে আসেন নারী বাছাই করতে। পরে তাঁরা বাছাই করা নারীদের ‘বিশেষ’ কক্ষে নিয়ে যান। সেই কক্ষে কোনো নজরদারি ক্যামেরা নেই। জিয়াউদুন নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁকে একাধিকবার রাতে সেল থেকে বিশেষ কক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরুষেরা।

জিয়াউদুন বলেন, তাঁর সঙ্গে শিবিরে যা ঘটেছে, তা ভোলার নয়। এটা সম্ভবত তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষত। সেখানে তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছিল, তা তিনি আর বলতে চান না।

ভুক্তভোগী জিয়াউদুন আরও বলেন, প্রতি রাতেই শিবিরের সেল থেকে নারীদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিশেষ কক্ষে নিয়ে এক বা একাধিক মাস্ক পরা চীনা ব্যক্তি এই নারীদের ধর্ষণ করেন। জিয়াউদুন বলেন, তিনি নিজে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই তাঁকে দুই বা তিন ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন।

বিবিসি বলেছে, জিয়াউদুনের ভাষ্য পুরোপুরি যাচাই করা অসম্ভব। কারণ, চীনে সাংবাদিকদের ওপর কঠোর বিধি জারি করে রেখেছে দেশটির সরকার। তবে তাঁর বিবরণের সঙ্গে অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ ও আগে প্রকাশিত হওয়া ভাষ্যের মিল রয়েছে।

উল্লেখ্য, জিনজিয়ান অঞ্চলের ‘পুনঃশিক্ষণ’ শিবির বেশ বড়। স্বাধীন হিসাবমতে, এই শিবিরে ১০ লাখের বেশি উইঘুর নারী-পুরুষ বন্দী আছেন। সেখানকার ব্যবস্থা বেশ গোপনীয়। ফলে শিবিরের ভিতরে কী ঘটে, তার খবরাখবর তেমন বাইরে আসে না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, চীন সরকার ধীরে ধীরে উইঘুরদের ধর্মীয়সহ অন্যান্য স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। জিনজিয়ানের শিবিরে উইঘুর নর-নারীকে সব সময় কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। শিবিরে তাঁদের ওপর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। সেখানে তাঁদের প্রজনন ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জোর করে তাঁদের বিশেষ মতবাদ শেখানো হচ্ছে। আর চীনের দাবি, এই শিবিরগুলোতে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পুনঃশিক্ষণের কাজ চলে।

সর্বশেষ খবর