মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ছদ্মবেশী ডাকাত দলের ১৬ জন গ্রেফতার

ডাকাতিতে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা কখনো গোয়েন্দা পুলিশ, আবার কখনো ফেরিওয়ালা। দিনের বেলা এভাবে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান। এরপর বাস ভাড়া নিয়ে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে নিজেরাই বাস চালিয়ে টার্গেট যাত্রী তোলেন। পরে অস্ত্রের মুখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে সর্বস্ব লুটে নিত যাত্রীদের। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ এ জাতীয় ডাকাত দলের ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতাররা ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় একইভাবে ডাকাতি করত। এদের মধ্যে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম সজীবের নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতির মাধ্যমে লুটে নেওয়া আটজন রয়েছেন। ওই চিকিৎসক গত ২০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন। তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও চোখ বেঁধে রাতভর তাকে বেদম পেটায় ডাকাত দল। তেজগাঁও বিভাগ ডিবির গোয়েন্দা দল তাদের গ্রেফতার করে। তারা হলেন নাইমুর রহমান ওরফে নাইম, আবু জাফর ওরফে বিপ্লব, সজীব মিয়া, জহুরুল ইসলাম, মো. আলামিন, দিলিপ ওরফে সোহেল, আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূইয়া আজাদ।

তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত চারটি চাপাতি, লোহার বাটযুক্ত ৪টি ছোরা, বিভিন্ন আকারের ৫টি লোহার রড, চোখ বাঁধায় ব্যবহৃত ৩টি গামছা, বিভিন্ন মডেলের ১০টি মোবাইল ফোন, খেলনা পিস্তল ২টি ও নগদ ৯ হাজার ৮০০ টাকা জব্দ করা হয়।

হাফিজ আক্তার আরও বলেন, এ ছাড়া পৃথক অভিযানে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মহানগর ও আন্তজেলা দুর্র্ধর্ষ ডাকাত দলের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন, মোজাম্মেল হোসেন আপেল, জাহাঙ্গীর আলম, জমির খান, মজিবর রহমান মজিদ, মাসুম গাজী, শফিকুল খরাদি, কুদ্দুস আলী ও কাউছার মিয়া। তাদের কাছ থেকে ডিবির নকল জ্যাকেট, দুনালা বন্দুক, ওয়্যারলেস সেট, হ্যান্ডকাফ, ছুরি ও মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডিবিকে জানিয়েছে, বিগত কয়েক মাসে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ঢাকা মহানগরের আশপাশ এলাকায় কয়েকটি ডাকাতি করেছে। এ চক্রে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বেশ কিছু সদস্য সম্পৃক্ত রয়েছেন।

ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার আরও বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। তাদের অনেকে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে তারা ডাকাতি করত।

অনেক ক্ষেত্রে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগীদের থানা থেকে ‘ভুল তথ্য’ দেওয়া হয় , যেসব থানা মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নে ডিবিপ্রধান বলেন, ডাকাতি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এ জাতীয় ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানাকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, ডাকাতি মামলা নেওয়া যাবে না। বরং যে কোনো ঘটনায় মামলা নিতে শক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব বিষয়ে গত রবিবার ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতার অভাবে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধীরা নিরাপদ এলাকা বেছে নেয়। যখনই এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে তখনই আমরা তৎপরতা শুরু করি। তারপর এসব ঘটনা আবার কমে যায়। তাই এখানে আমরা কারও অবহেলার বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না। আমরা যদি ঠিকভাবে এগুলো নজরদারিতে রাখি, তাহলে অটোমেটিক্যালি এসব ঘটনা কমে যাবে। আর চিহ্নিত কিছু এরিয়ায় আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর