মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বেতনের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিতীয় বিয়ের জেরে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের মেয়ে বৃষ্টি আক্তারের। প্রথম ঘরের দুই মেয়েকে বড় বোনের কাছে রেখে গাজীপুরে গার্মেন্টে চাকরি নেন। সেখানেই পরিচয় হয় আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। তার প্ররোচনায় দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু আসাদুলেরও অনৈতিক কাজ, যৌতুকের জন্য চাপ, আর বেতনের টাকা আত্মসাৎ ঘিরে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ১৩ জানুয়ারি রাতে বৃষ্টি আক্তারকে (২৩) শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যান আসাদুল ইসলাম (২৬)। ঘটনার পর কেউ জানত না বৃষ্টি খুন হয়েছে। দুই দিন পর বৃষ্টির পরিবারের উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৪। গত রবিবার রাতে তারা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অভিযান চালিয়ে বৃষ্টি আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামি আসাদুলকে গ্রেফতার করে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষ থেকে বৃষ্টি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই দিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই ঘটনায় র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। আসাদুল গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বৃষ্টিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, বৃষ্টি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার মেয়ে। ২০১২ সালে তার প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম স্বামীর সংসারে তার ছয় বছর ও চার বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করলে বৃষ্টির সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রথম স্বামী বৃষ্টিকে তালাক দেন। এরপর বৃষ্টি গাজীপুরে তার বোনের সঙ্গে থেকে গার্মেন্টে চাকরি করার সময় আসাদুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। বৃষ্টির আগের স্বামী থেকে তালাক বাবদ পাওয়া টাকা আত্মসাতের লক্ষ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে আসাদুল। একপর্যায়ে বৃষ্টিকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ২০২০ সালে ১ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, বিয়ের আগে আসাদুল বৃষ্টির প্রতি অনেক যত্নশীলতা ও সহমর্মিতা দেখাত। কিন্তু বিয়ের পরপরই রূপ পাল্টে যায়। সে বৃষ্টির আগের স্বামীর সঙ্গে তালাকের পর প্রাপ্ত অর্থ এবং মাসিক বেতনের ওপর লোভাতুর দৃষ্টি দেয়। বিয়ের পর তারা গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তাদের মাঝে মাঝেই কলহ হতো। পরে তারা গাজীপুর থেকে আশুলিয়ায় এসে একটি গার্মেন্টে চাকরি নিয়ে গার্মেন্টের কাছে বাসা ভাড়া নেয়। তারা দুজনেই একই মোবাইল ব্যবহার করত এবং তাদের বেতনের টাকা সেই মোবাইলেই আসত। বৃষ্টি সেখানে বেতন পেত ১৮ হাজার টাকা। আর আসাদুল বেতন পেত ১২ হাজার টাকা। বৃষ্টির সেই বেতনের ১৮ হাজার টাকা আসাদুল নিজে উত্তোলন করত। বৃষ্টিকে কোনো টাকা দিত না। এমনকি হাত খরচের টাকাও দিত না। পুরো টাকা নিজে আত্মসাৎ করত। বৃষ্টির প্রথম পক্ষের দুই সন্তান থাকায় তাকে সন্তানদের খরচ চালাতে আসাদুলের কাছে বেতনের টাকা চাইলে কোনো টাকা দিত না। ঘটনার তিন/চার মাস আগে স্বামী আসাদুল একাধিক পরনারীতে আসক্ত হওয়ার তথ্য বৃষ্টি জেনে যাওয়ায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আশুলিয়ায় আসাদের পরকীয়াকে কেন্দ্র করে তারা বাসা পরিবর্তন করে বর্তমান বাসায় আসে। তবে আসাদুল অন্য মেয়েদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে, ইমো ভিডিও কল ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখত। ঘটনার দিন ১৩ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে আসাদুল বাসায় ফিরলে বৃষ্টি আসাদুলের মোবাইলে অন্য নারীর অপ্রীতিকর ছবি ও কথোপকথন দেখতে পেয়ে রাগারাগি করে। একপর্যায়ে আসাদুলের মোবাইল ভেঙে ফেলে। আসাদুল ক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টির কিস্তির টাকায় কেনা টিভি ভেঙে ফেলে। ঝগড়ার একপর্যায়ে আসাদুল বৃষ্টির গলাটিপে ধরে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে বৃষ্টিকে হত্যা করে। পরে লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর