রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

নতুন নিয়মে ৪ হাজার কনস্টেবল নির্বাচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষ নগর ইউনিয়নের খিরসিন গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুস সালাম। সম্পদ বলতে শুধু ভিটেবাড়ি, এক ছটাক জমিও নেই। তার ছেলে জিহাদ আল নয়ন। মাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়। পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়েছে। ধাপে ধাপে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কনস্টেবল পদে মনোনীত হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকায় ছেলের পুলিশে চাকরি হওয়ায় আবেগ আপ্লুত আবদুস সালাম। লাবণী রানী সাহা। বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার হাস্তাবসন্তপুর গ্রামে। বাবা লিটন চন্দ্র সাহা, মুদি দোকানের একজন কর্মচারী। তাদের আজ খুশির দিন। লাবণী রানী সাহা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। মেয়ের চাকরি হওয়ার খুশিতে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি লিটন চন্দ্র সাহা। বলছিলেন, বিনা পয়সায় আমার মেয়ে চাকরি পেয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি হয়, এটি আজ দেখলাম। দিনমজুর বাবা নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেনের চোখে আনন্দাশ্রু। বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার জয়পার্বতীপুর গ্রামে। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা তিনি। শুধু সালাম, নাজমুল বা লাবণীই নয়, তাদের মতো অনেক প্রান্তিক পরিবারের সদস্যই নিজের মেধা ও যোগ্যতায় প্রাথমিকভাবে কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়েছেন। চাকরি পাওয়ার আনন্দে রীতিমতো আবেগাপ্লুত তারা। তাদের অনেকেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কোনো ধরনের অর্থ বা তদবির ছাড়াই চাকরি হয়।

নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সেরা প্রার্থীদের পুলিশে নিয়োগ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি বলেন, আমরা জব মার্কেট থেকে ‘বেস্ট অব দি বেস্ট’ প্রার্থী বাছাই করতে সক্ষম হয়েছি। যারা মেধা এবং শারীরিক দিক থেকে অধিকতর যোগ্য। তারা জনগণকে আধুনিক ও উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম হবেন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, কনস্টেবল পদে ৪ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি। আবেদনের শেষ দিন ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। মোট আবেদনকারী ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮০ হাজার ৭৪০ জন, নারী ১৫ হাজার ৯৮১ জন। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল এবং উচ্চতার ভিত্তিতে শূন্য পদের বিপরীতে ১:৩৫ অনুপাতে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬০৩ জন প্রার্থী বাছাই করা হয়। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৩৭ জন এবং নারী ১৪ হাজার ৬৬৬ জন। ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্টে উত্তীর্ণ হয় ৩১ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩১ হাজার ২৫৪ জন। এদের মধ্য থেকে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার প্রার্থী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছেন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে দীর্ঘ চার দশক পর বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগবিধি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত নিয়োগবিধিতে এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো ৩ হাজার প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে চার হাজার প্রার্থী নিয়োগ করা হলো। যা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর