বিভিন্ন সময় পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে। এতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয়নি। এটাকে এক ধরনের রেকর্ডও বলা যেতে পারে। এর বাইরে সংসদ সদস্যদের আনা যে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে সেগুলো মূলত বিলের ভাষাগত পরিবর্তন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে এ বিল কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় সংসদে সরকার ও বিরোধীদলীয় এমপিরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এর আগে অর্থবিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের জন্য যেসব প্রস্তাব আসে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়। অর্থবিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহিত হয়। বাকিগুলো সদস্যদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এর আগে গতকাল বাজেট অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থনীতিকে সচল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন বাড়ানো, পল্লী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো, কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঘোষিত প্রণোদনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে মোট ২৩টি বাজেট দিয়েছে। এবারের বাজেটটি চলতি মেয়াদের চতুর্থ। তার আগে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সমাপনী বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বাজেটের ওপর তেমন কোনো আলোচনা না করলেও পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানান।
আজ বাজেট পাস : আজ ৩০ জুন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন। সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হবে। গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেটের মোট আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ ৪০ হাজার ১ কোটি ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপির আকার : আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অর্থবিল পাসের জন্য ভোটে দেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বেশির ভাগ সংসদ সদস্য এতে সমর্থন জানিয়ে কণ্ঠভোটের পক্ষে রায় দেন। যার মাধ্যমে পাস হয় অর্থবিল-২০২২। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।