মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধপল্লী পালানো বাংলাদেশি দুই নারীর ঘরে ফেরার আকুলতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে প্রথমবার ভারতে পা রাখতেই আম্বিয়া বেগম (৩৫) ও রুকসানা বেগমের (৪০) জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। দালালের হাত ধরে অবৈধভাবে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বাই শহরে এসেছিলেন। কিন্তু দালালরা দেড় লাখ রুপিতে তাদের আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করে দেয় পতিতাপল্লীতে। নিজেদের বুদ্ধির জোরেই দালালচক্রের সেই জাল থেকে বেরিয়েও আসেন তারা। কিন্তু ফের অবৈধভাবে দেশে ফেরত যাওয়ার সময় তাদের আটক করে বিএসএফ তুলে দেয় পুলিশের হাতে। আম্বিয়ার বাড়ি নাটোরে আর রুকসানার বাড়ি ফরিদপুরে।

ভারতে বাসায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সুদূর মুম্বাইয়ে পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাদের।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই বাংলাদেশি নারী জানান, এক মাস আগে তারা বাংলাদেশের এক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। দালাল চক্র তাদের বলেছিল মুম্বাইয়ে বাসা-বাড়িতে মোটা বেতনে পরিচারিকার কাজ দেবে। মালদা জেলার কোনো এক সীমান্ত দিয়েই নদীপথ হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ আম্বিয়া ও রুকসানার।

এরপর কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে দুই দিন পর তারা পৌঁছেন বাণিজ্য নগরী মুম্বাই শহরে। কিন্তু সেখানকারই কোনো এক পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে দেওয়া হয় আম্বিয়া ও রুকসানাকে।

সেই নিষিদ্ধপল্লীতে গিয়েই নিজেদের মধ্যে আলাপ হয় আম্বিয়া ও রুকসানার। তারা পরিকল্পনা করেন যেভাবেই হোক ওই জীবন থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশে ফিরতে হবে।

১৪ অক্টোবর ওই দুই নারী কৌশলে মুম্বাইয়ের নিষিদ্ধপল্লী থেকে পালিয়ে সুদূর মুম্বাই থেকে ট্রেন, বাসে করে মালদায় আসেন। রবিবার রাতে মালদা রেলস্টেশনে নেমে সিএনজি করে তারা আদমপুর এলাকায় পৌঁছান। বিএসএফের কর্তব্যরত জওয়ানেরা আদমপুর সীমান্তে ওই দুই নারীকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এর পরই সব বিষয় সামনে বেরিয়ে আসে। মালদা আদালতে নেওয়ার পথে কান্নায় ভেঙে পড়েন আম্বিয়া বেগম।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের পরিবারে খুবই অভাব। একটা কাজ চেয়েছিলাম, টাকা রোজগার করব বলে। কিন্তু দালালদের খপ্পরে এভাবে পড়ে যাব ভাবতে পারিনি। ওরা আমাদের মুম্বাইর খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছিল।’

আম্বিয়া জানান, মুম্বাইয়ে তাদের মতো অনেক বাংলাদেশি ও নাবালিকা রয়েছে। শুধু তারা দুজনই ওখান থেকে কোনোরকমে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু সীমান্তে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলেন।

প্রশাসনের কাছে আম্বিয়া ও রুকসানার আবেদন : দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সর্বশেষ খবর