সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সৌদি গিয়ে নিখোঁজ রোজিনাকে ফেরত চায় পরিবার

ফরিদপুর প্রতিনিধি

দালালের প্রলোভনে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছেন রোজিনা আক্তার (২২) নামে এক নারী। দুই মাস আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হলেও এখন আর রোজিনার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রোজিনার বাবা-মা এখন দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের সহযোগিতায় রোজিনার যাতে খোঁজ পান সেই প্রত্যাশা করছেন তারা।

জানা গেছে, ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর রেললাইন এলাকার দিনমজুর ইউনুস ফকিরের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রোজিনা ছোট। আট বছর আগে গার্মেন্টে কাজের সন্ধানে রোজিনা ঢাকায় যান। সে সময় এক ফ্যাক্টরিতে তিনি কাজ করতেন। কাজ করার সুবাদে রোজিনার সঙ্গে পরিচয় হয় শেরপুরের ট্রাক চালক ওসমানের। ছয় বছর আগে ওসমানের সঙ্গে রোজিনার বিয়েও হয়। বিয়ের পর থেকে রোজিনার ওপর নানা অত্যাচার চালাত স্বামী। ফলে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি ফরিদপুর। ঢাকায় চাকরির সুবাদে পরিচয় হয়েছিল হানিফ নামে এক মানব পাচারকারীর সঙ্গে। সেই হানিফ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রোজিনাকে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে। দালালের কথায় রাজি হয়ে ফাঁদে পা দেন রোজিনা। পরিবারের অমতে তিনি দুই বছর আগে সৌদি আরব যান গৃহকর্মীর ভিসা নিয়ে।

সৌদি আরবে যাওয়ার পর রোজিনা মাঝে মধ্যেই তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। সন্তানের খোঁজও নিতেন। দালালের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কথা বললেও রোজিনার পরিবার তাদের কোনো ঠিকানা না জানায় তারা টাকা আনতে পারেননি। দুই মাস আগে সর্বশেষ রোজিনা কথা বলে তার মা হাসিনা বেগমের সঙ্গে। সে সময় ফোনে তার মাকে বলেছিলেন, তার খুব কষ্ট হচ্ছে। সে আর বিদেশে থাকতে চায় না। তাড়াতাড়ি চলে আসবে। এরপর থেকেই আর কোনো খোঁজ নেই রোজিনার। যে মোবাইল ফোনে রোজিনা কথা বলতেন সেই ফোনটি এখন আর কেউ ধরে না। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে এখন বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রোজিনার অসহায় বাবা-মা। মা হাসিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি অনেক মানা করছি বিদেশ যাইতে। সে আমাদের কথা শুনেনি। দালাল তাকে বাড়ি করে দিবে, অনেক টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে বিদেশে পাঠায়। এখন আমার মাইয়্যাডার কোনো খোঁজ নাই। আমি কার কাছে গিয়ে খোঁজ নিমুু, কোথায় যামু, দেশে হইলে খুঁজতাম। বিদেশে কুনহানে আছে, আমার মাইয়্যাডা বাইচ্যা আছে নাকি তাকে মাইরা ফালাইছে তাও জানি না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমার কলিজার মাইয়াডারে যাতে আমার কাছে ফিরাইয়া আইন্যা দেয়।’

রোজিনার বাবা ইউনুস ফকির বলেন, ‘আমি ছোট কাজ করি। আমার বউ বাসা বাড়িতে কাজ করে। এ দুজনের টাকা দিয়া সংসার চালাই। আমার মেয়েকে যে দালাল বিদেশ পাঠাইছে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আমার মেয়েকে জীবিত কিংবা লাশ হলেও ফেরত চাই। যাতে মেয়েকে শেষ বারের জন্য হলেও একটু দেখে পরানডা জুড়াইতে পারি।’

সর্বশেষ খবর