শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাফিয়াদের হাতে বন্দি বছর ধরে

মাদারীপুর প্রতিনিধি

শাহাবুল হোসেন মাতুব্বর (৪৫) মাদারীপুর সদর উপজেলার নয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা। অভাব-অনটনের সংসারে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এক বছর ধরে তার সন্ধান নেই। পরিবারের লোকজন জানেন না কেমন আছেন শাহাবুল। বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন। তবে এরই মধ্যে তাকে লিবিয়ায় বন্দি করে নির্যাতন করা হয়েছে। তার পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। অবশেষে এ ঘটনায় মামলা করেন শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর। তবে মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্তদের কেউ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শাহাবুলের পরিবার। মামলার নথি থেকে জানা গেছে, পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০২২ সালের ১২ মার্চ সরল বিশ্বাসে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের এমদাদ বেপারীর সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয় সরাসরি বিমানে শাহাবুলকে ইতালি পাঠানোর। এমদাদের খালাতো ভাই আল আমিন হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে ইতালি থাকেন। তিনিই সব ব্যবস্থা করবেন এমন বিশ্বাসে এমদাদ বেপারীর প্রলোভনে শাহাবুল মাতুব্বর তাকে ইতালি পাঠানোর জন্য এমদাদ বেপারী (৫০), আয়শা বেগম (৪০), লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের নাসির তালুকদার (৩৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৮), আল আমিন হাওলাদার (৩৫) ও হাজরাপুর গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে ওই বছর ২৫ মার্চ শাহাবুলকে এই মানব পাচারকারী চক্র সরাসরি ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়। এরপর মাফিয়ারা বন্দি শাহাবুলকে নির্যাতন করে আরও ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মুক্তিপণের জন্য ধারদেনা করে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা স্থানীয় মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পরও শাহাবুলকে মুক্তি দেয়নি মাফিয়ারা। এর পর থেকে শাহাবুলের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগও বন্ধ। পরিবারের সদস্যরা এক বছর ধরে শাহাবুলের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। কোনো খোঁজখবরও পাচ্ছেন না। এতে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন তারা। ছেলেকে ফিরে পেতে শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর ২৩ মে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে আদালতে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এ বিষয়ে মামলার বাদী গফুর মাতুব্বর বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইতালি নেবে বলে আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয় আসামিরা। পরে ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে আরও ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেয়। তারা আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেয়নি কিংবা আমাদের কাছে ফিরিয়েও দেয়নি।

আমার ছেলে এখন বেঁচে আছে কি না তা-ও আমরা জানি না। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও পুলিশ এখনো প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে পারেনি। ছেলেকে ফিরে না পাওয়ায় আমরা পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের ছেলেকে চাই।’ নিখোঁজ শাহাবুলের মামাতো ভাই মো. ইদ্রিস মোল্লা বলেন, ‘আমি শাহাবুলকে ইতালি পাঠানোর টাকা লেনদেনের সময় উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা এক বছর ধরে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আদালতে মামলা করেও এ ঘটনার তেমন কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। থানা পুলিশের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন অবিলম্বে মামলায় উল্লিখিত মানব পাচারকারী আসামিদের গ্রেফতার করে শাহাবুলকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে।’ এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ মামলার প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে শাহাবুলের খোঁজ পাওয়া যাবে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

সর্বশেষ খবর