দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মচারী গৌতম ভট্টাচার্যসহ ঘুষ লেনদেনের সময় গ্রেফতার চারজনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গতকাল তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রুহুল আমীন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গৌতম ছাড়াও রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো. এসকেন আলী খান, হাবিবুর রহমান এবং পরিতোষ ম ল। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মতিঝিল থানার হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলা থেকে দুদকের মহাপরিচালক মোকাম্মেল হকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্যসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। তাদের কাছ থেকে মিষ্টির চারটি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের একটি খাম ও দুদকের একটি নোটিস জব্দ করা হয়। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, গৌতম ভট্টাচার্যের বাড়ি মৌলভীবাজার। তিনি মূলত প্রতারক চক্রের হোতা। অন্যদের মধ্যে একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং বাকি দুজন দালাল। গ্রেফতার এই তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জ। গৌতম ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামানকে ভুয়া একটি মামলার ভয় দেখিয়ে ৫ কোটি টাকা দাবি করেন। টাকা নিয়ে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেন। সমঝোতা অনুসারে প্রথমে ২ কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে দিতে বলা হয় ১ কোটি টাকা। বিনিময়ে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। ১ কোটি টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। বাকি টাকা আগামী রবিবার (আজ) ব্যাংক আওয়ারে পরিশোধের সমঝোতা হয়। ভুক্তভোগীর বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। তখন ডিবির লালবাগ বিভাগের একটি টিম ফাঁদ পেতে হিরাঝিল হোটেল থেকে তাদের গ্রেফতার করে। এই ঘটনার সঙ্গে দুদকের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা বা পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এই বিষয়ে তদন্ত চলছে। আসামিদের রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করব। গ্রেফতারদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কতজন মানুষ প্রতারিত হয়েছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে বিষয়ে তদন্ত শেষে বলা যাবে।
জানা গেছে, আশিকুজ্জামান একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে তার কার্পেটের দোকান। তিনি মূলত ইমপোর্ট করা কার্পেট ও জায়নামাজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সরবরাহ করেন। ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদকের মনোগ্রাম ও সিল সংবলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিস নিয়ে হাজির হন একজন অফিসার। আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে সোনার চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ ওই নোটিসে উল্লেখ করা হয়।