সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিস্ফোরণে জাহাজের তিন কর্মী এখনো নিখোঁজ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী জাহাজ ‘সাগর নন্দিনী-২’ থেকে প্রায় ৮ লাখ লিটার পেট্রল ও  ডিজেল পদ্মা অয়েল ডিপোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি তেলও সরিয়ে নিতে কাজ করছে অন্য দুটি তেলবাহী জাহাজ। এমন খবর নিশ্চিত করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মাস্টার ব্রিজ ও কেবিন উদ্ধারে বরিশাল থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘নির্ভীক’ কাজ শুরু করেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, পুলিশ সমন্বয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে তাঁরা জাহাজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করে কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজে সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন স্থানে চষে বেড়াচ্ছেন। জানা যায়, সাগর নন্দিনি-২ নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ১১ লাখ লিটার পেট্রল ও ডিজেল ভর্তি করে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পার্শ¦বর্তী পদ্মা ওয়েল ডিপোতে তেল খালাস করার জন্য আসে। জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় নদীর অপর প্রান্তে শনিবার দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। আগুনে দগ্ধ হয় জাহাজের শ্রমিক শাকিল (৩৫), ফরিদুল আলম (৫০), ইকবাল হোসেন (২৭) ও মাইনুল ইসলাম হৃদয় (২৯)। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে পাঠানো হয়। গতকাল দুপুরে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিন খান, চালক একরাম হোসেন, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমানের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জাহাজের গ্রিজার আবদুস সালাম হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

 হৃদয় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাগর নন্দিনী ২ জাহাজে গ্রিজার পদে কাজ করেন। কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাফায়েত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ছয় মাস আগে ডুবেছিল এমভি সাগর নন্দিনী-২ : ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর একই স্থানে নন্দিনী-৩ আগুনে সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর এই ট্যাংকারটি ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল এমভি সাগর নন্দিনী-২। পরদিন ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে ভোলার মেঘনা নদীর ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ট্যাংকারটির সংঘর্ষ হয়। এতে তলা ফেটে ট্যাংকারটি ডুবে যায়। ওই সময় ট্যাংকারে থাকা ১৩ জন কর্মী সাঁতরে তীরে ওঠেন। ডুবে যাওয়ার সাত দিন পর দেশি প্রযুক্তিতে দুটি বার্জের মাধ্যমে সাগর নন্দিনী-২ ভাসানো হয়। বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, প্রাইভেট স্যালভেজ ও মোংলা বন্দরের জাহাজ ‘অগ্নিপ্রহরী’ উদ্ধার কাজে সহায়তা করে। ধারণা করা হচ্ছে মেঘনায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় আবারও ব্যবহার করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

 

সর্বশেষ খবর