মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
কোরআন পোড়ানো নিয়ে সিলেটে উত্তেজনা, সড়ক অবরোধ

পুলিশের ফাঁকা গুলি আটকদের মধ্যে দুজন শিবিরের সাবেক কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের একটি কলেজে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর খবরে উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। এ সময় জনতার ছোড়া ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

তারা হলেন সিলেট মহানগরের আখালিয়ার ধানুহাটারপাড় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান নুরুর রহমান, একই কলেজের শিক্ষক মাহবুব আলম ও ইসহাক আহমদ। এর মধ্যে নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম সাবেক শিবির কর্মী এবং ইসহাক বাংলাদেশ বেতার সিলেটের কারি বলে জানিয়েছে পুলিশ। নুরুর রহমান আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছাড়াও জৈন্তাপুরের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিবার রাত ১০টার দিকে আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নুরুর রহমানের বিরুদ্ধে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগ তোলেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে এনে কোরআন শরিফে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। মুহূর্তে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ লোকজন এসে অধ্যক্ষ নুরুর রহমান ও শিক্ষক মাহবুব আলমকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে অবরুদ্ধ দুই শিক্ষককে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এতে লোকজন আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোতোয়ালি ও জালালাবাদ থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআরটি ও র‌্যাবের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশ ও জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় পুলিশের অন্তত ২০ সদস্য আহত হন। বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে। রাত ২টার দিকে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং অধ্যক্ষ নুরুর রহমান ও মাহবুব আলমকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রবিবার বিকালে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদরাসার শিক্ষক ইসহাক আহমদ এক কার্টুন ও এক বস্তা ভর্তি কোরআন শরিফ দিয়ে যান আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নুরুর রহমানের কাছে। ইসহাক আহমদ ওই কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক ও সিলেট বেতারের কারি। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, রবিবার রাত ১০টার দিকে নুরুর রহমান ও মাহবুব আলম বস্তায় থাকা ৪৫টি কোরআন শরিফ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং এ দুজনকে মারধর শুরু করে।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে হাজার দশেক লোক ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে জনতার হাত থেকে নুরুর রহমান ও মাহবুবকে উদ্ধার করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়লে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও শটগান ব্যবহার করে।

সর্বশেষ খবর