সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দরবেশ বাবা সেজে হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দরবেশ বাবা সেজে নানা প্রলোভন দেখিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্নজনের কাছ থেকে ওরা হাতিয়ে নিত টাকা। দেশের উচ্চবিত্ত এবং সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ ফ্রান্স, ইতালি প্রবাসীরা ছিল তাদের টার্গেট। ব্যক্তিগত নানা সমস্যার সমাধানের আশায় বা লটারি পাইয়ে দেওয়া ও জুয়ায় জিতিয়ে দেওয়া প্রলোভনে পড়ে দরবেশ বাবাকে টাকা দিত তারা। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। অবশেষে ঢাকায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর হাতে ধরা পড়েছে এই প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুজন। গ্রেফতার করার পর প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা। গতকাল এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত এসপি (মিডিয়া) আজাদ রহমান। তিনি বলেন, এই চক্রটি ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভনসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে আনোয়ারা বেগম নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যখন বুঝতে পারেন যে, প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, তখন তিনি প্রতারকদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সেই মামলার সূত্রে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে প্রথমে চক্রের সদস্য মো. তানজিল আহমেদ ওরফে তানজিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলার বোরহানউদ্দিন এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা মো. হাসেমকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারক হাসেম হিন্দি ও আরবি ভাষায় কথা বলাসহ বিভিন্ন রকম কণ্ঠে কথা বলতে পারে।

সিআইডির অতিরিক্ত এসপি বলেন, দরবেশ বাবা পরিচয়ে প্রতারণাকারী চক্রটি ফ্রান্স প্রবাসী মো. ইমাম হোসেনের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একইভাবে লটারি ও জুয়ায় টাকা জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে ইতালি প্রবাসীর কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে হাসেম জানায়, প্রথমে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ছোট ছোট অ্যামাউন্টের টাকা নিত তারা। এরপর বড় অ্যামাউন্টের টাকা নেওয়ার সময় তানজিলকে পাঠাত। জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারকরা আরও জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের চক্রের ২০ থেকে ২৫ জন ক্লায়েন্ট আছে। মালয়েশিয়াতে আছে ১০ থেকে ১২ জন। এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ জন ফিক্সড ক্লায়েন্ট। যারা গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে নিয়মিত এই দরবেশ বাবারূপী প্রতারককে টাকা দিয়ে আসছে।

সিআইডির কাছে প্রতারক দরবেশ বাবা স্বীকার করে যে, ২০০৫ সাল থেকে তারা এই কাজ করছে। প্রথম দিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিত। পরে ২০১৬ সাল থেকে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে। ফেসবুকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট বুস্ট করে। তার প্রধান টার্গেট ছিল স্বল্প শিক্ষিত প্রবাসী বাঙালি। যারা সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত। এ ছাড়াও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ও ফ্রান্সে বিজ্ঞাপন প্রচার করত তারা। এভাবেই অনেক মানুষের কাছে দরবেশ বাবা হয়ে ওঠে। পরে দরবেশ পরিচয় দিয়ে কথা বলে তাদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিত।

সর্বশেষ খবর