সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্টের তিন প্রতারক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জমি বিক্রি করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। জমি কেনার আগ্রহ দেখিয়ে তাকে ঢাকার উত্তরার অফিসে ডাকে সংঘবদ্ধ রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্ট (আরসিডি)। সেখানে গিয়ে জমি কেনাবেচার কথাবার্তার মধ্যেই আসে দামি রোলেক্স ঘড়ির ব্যবসার বিষয়। ভারতীয় পার্টনারের সঙ্গে ঘড়ি ব্যবসায় লগ্নি করার কথা বলে একজন ৩০ লাখ টাকার বান্ডেল দিয়ে চলে যান। সাইফুলকেও ঘড়ি ব্যবসার পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। জমি বিক্রির পাশাপাশি ঘড়ির ব্যবসার লাভের প্রলোভনে পড়েন সাইফুল। সঙ্গে যাওয়া ভায়রা আবদুল মান্নানের সঙ্গে আলাপ করে পর দিন ২০ লাখ টাকা প্রতারকদের কাছে দেন। এর পর দিন জমির রেজিস্ট্রেশনের কথা ছিল। সেদিন থেকে চক্রের সবার নম্বর বন্ধ। এক পর্যায়ে উত্তরার অফিসে গিয়ে চক্রের এক সদস্যকে আটক করে থানায় খবর দেন সাইফুল। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ওই মামলার তদন্ত পায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। তদন্ত করতে গিয়ে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। শনিবার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- চক্রের মূল হোতা আবদুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খান, মো. রাশেদ ওরফে রাসেল ও মো. নাঈম। গতকাল আগারগাঁও পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই বিমানবন্দর থানা ও উত্তরা পশ্চিম থানায় করা প্রতারণার মামলার তথ্য মতে, সাইফুল ইসলাম ২৬ শতক জমি বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেন।

বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার শরীফ নামে একজন জানান, তার মালিক আফসার উদ্দিন খান জমি কিনবেন। তাদের জমির কাগজপত্র নিয়ে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় যেতে বলেন। সাইফুল ইসলাম ও আবদুল মান্নান গত ১৭ জুলাই ওই ঠিকানায় যান ও জমির মূল্য নির্ধারিত হয়। জমির মূল্য নির্ধারণের পর ১৯ জুলাই হাজীগঞ্জ চাঁদপুরে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য যাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। জমি-জমার কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর গ্রেফতার মোয়াজ্জেম হোসেন হঠাৎ করে আফসার উদ্দিন খানকে বলেন, তার মালিক ভারতীয় নাগরিক। তিনি কিছু দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি কিনবেন। ঘড়ি দিতে পারলে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার নগদ ব্যবসা হবে। তখন মূল হোতা আফসার ও মোয়াজ্জেম ভারতীয় নাগরিক মালিককে আসতে বলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর এক লোক আসে। তাকে ভারতীয় নাগরিক ও ঘড়ি কেনার জন্য আসছেন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঘড়ি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে হোতা আফসারকে ঘড়ি কেনা বাবদ অগ্রিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দেন এবং অবশিষ্ট টাকা পর দিন ১৮ জুলাই পরিশোধ করে ঘড়ি বুঝে নিয়ে যাবেন বলে চলে যান। পরবর্তীতে আফসার বাদী আবদুল মান্নানকেও এ ঘড়ির ব্যবসায় পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেন। পার্টনার হতে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আমদানিকারক ঘড়ি সরবরাহ করবে এবং সবাই সমানভাবে ব্যবসায় লাভবান হবেন। আবদুল মান্নান ও সাইফুল ইসলাম পর দিন দুপুরে একই স্থানে ২০ লাখ টাকা আফসারের হাতে তুলে দেন। পর দিন জমি রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কথা। কল দিয়ে সাইফুল ও মান্নান সবার নম্বর বন্ধ পান। বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মোয়াজ্জেমকে আটক করে বিমানবন্দর থানায় খবর দেন তারা। পুলিশ এসে মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে। পুলিশ মোয়াজ্জেমকে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠায়। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশ রাশেদ ওরফে রাসেল ও মো. নাঈমকে গ্রেফতার করে। চক্রের আরেক সদস্য মাসুদ পলাতক রয়েছে।

সর্বশেষ খবর