সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চসিকে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তিহীন নিয়োগ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী ২ হাজার ৭৭০ জন এবং অস্থায়ী ৬ হাজার ৩৩ জন। কিন্তু মামলাসহ নানা জটিলতায় অস্থায়ীদের স্থায়ী করা হচ্ছে না। প্রায় ২৮-৩০ বছর চাকরি করেও অস্থায়ী পদে থেকেই অবসরে যেতে হচ্ছে অনেককে। এমন অবস্থায়ও চসিক ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে।

এ নিয়ে অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। চসিকে বর্তমানে অনুমোদিত জনবল ৪ হাজার ২২৬টি। এর বিপরীতে শূন্য পদ আছে ১ হাজার ৪৫৭টি। অভিযোগ উঠেছে, চসিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। নগর ভবনে গুঞ্জন উঠেছে, প্রতিটি নিয়োগে  বিনিময় হচ্ছে অর্থ। তবে এ বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো শ্রমিক মুখ খুলছেন না।

নিয়োগপত্রগুলোতে দেখা যায়, এতে লেখা আছে ‘চসিকের তাৎক্ষণিক জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য কাজ নাই মজুরি নাই (নো ওয়ার্ক নো পে) ভিত্তিতে শ্রমিক পদে দৈনিক ৪৫২ টাকা মজুরিতে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে শর্ত সাপেক্ষে চাকরিতে নিয়োগ করা হলো।’ সব নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ। 

চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রায় ২১০ জন শ্রমিককে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি স্থায়ীকরণ নিয়ে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই চসিকের। বিষয়টা অমানবিক। সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, নানা কারণে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না এবং অস্থায়ীদের স্থায়ীও করা যাচ্ছে না। কিন্তু করপোরেশনে বিভিন্ন বিভাগে জনবল  সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক না থাকলে নাগরিক সেবার কাজগুলো করা যাচ্ছে না। এগুলো না করলে আবার নগরবাসী চসিককে দোষারোপ করছে। তাই বাধ্য হয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তা নিয়ে অনেক কথাই উঠবে। কিন্তু কেউ কি এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে। নিয়োগগুলো সরাসরি মেয়রই তদারকি করেন।

চসিক সূত্রে জানা যায়, স্থায়ীকরণ নিয়ে অস্থায়ী কর্মরতরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু এ নিয়ে চসিক কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। একাধিকবার বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়। এরই মধ্যে চসিক কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে গত ২৩ জুলাই গণস্বাক্ষর সংবলিত লিফলেট মেয়রকে হস্তান্তর করে। তাছাড়া গত সপ্তাহে অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের ফার্মাসিস্ট পদে ১৯৯৫ সালে যোগ দেন ১৫ জন। তারা অস্থায়ী হিসেবেই চাকরি করে প্রায় ২৯ বছর। কিন্তু তারা এখনো অস্থায়ী। একইভাবে চসিকের ওয়ার্ড সচিব পদে অস্থায়ী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন কয়েকজন। তারাও অস্থায়ী হিসেবে চাকরির প্রায় ২৮ বছর পার করলেও এখনো অস্থায়ী। এভাবে অন্তত ২ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অস্থায়ী পদে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন প্রায় শেষ করে আসছেন। আগামী দুই-তিন বছর পর তারা অবসরে যাবেন। ফলে তারা অস্থায়ী হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে অস্থায়ী হিসেবেই অবসরে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি বা নিয়ম অনুসরণ না করেই চসিক নিয়মিত শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর