সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কুমিল্লায় মিছিলে হামলা

ছাত্র ও যুবলীগের ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রঐক্যের মিছিলে হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৫০০ জনকে আসামি করে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসী। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, এখেেনা কোনো অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার প্রদত্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পর্কে কটূক্তি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া, মুন্সীগঞ্জের জাতীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে স্থানীয় মেয়র প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক গালমন্দ, হুমকি দেওয়া, চারণ কবি রাধা রমণকে মারধর, সারা দেশে দুর্গামূর্তি ভাঙচুর, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

সমাবেশ শেষে কান্দিরপাড় অভিমুখে রওনা হই। এ সময় পুলিশ আমাদের মিছিলটি করভবনের সামনে বাধা দেয়। অগ্রসর না হয়ে ফিরে আসতে থাকলে হঠাৎ অজ্ঞাতনামা আসামিরা অস্ত্র, রড, লাঠি, ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে করতে আমাদের মিছিলটি ধাওয়া করে। তখন মিছিলে অংশগ্রহণকারী মহিলা, পুরুষ সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে বহু লোককে জখম করে। একপর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আক্রমণ করার সময় এবং আক্রমণ শেষে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ব্যানার ব্যবহার করে হামলাকারীরা স্লোগান দিয়েছে।

এদিকে মিছিলে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ সুপারকে আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তা না হলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জোরালো কর্মসূচি দেওয়া হবে। গতকাল সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা কুমিল্লায় হামলায় আহতদের দেখতে এসে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ছাত্রঐক্য পরিষদের সভাপতি সুদীপ্ত সরকার সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক শিপন বারৈসহ অন্যরা। গতকাল বিকালে ঐক্য পরিষদের নেতারা প্রথমে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তারা ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানের সঙ্গে কথা বলেন। আলোচনা শেষে সংগঠটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক সংবাদকর্মীদের বলেন, আমরা গেল শুক্রবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা মিডিয়ায় দেখেছি। আমরা পুলিশ সুপারকে বলেছি, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া দুর্গাপূজায় যেন বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীর ঠাকুরপাড়া কালীবাড়ি মন্দিরে যান। সেদিন মিছিলে যারা আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পূজা উদযাপন নিয়ে এক সভা হয়। এ সময় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ‘মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানিয়ে দেওয়া একটি বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দফতর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘সাম্প্রদায়িক উক্তি’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এ বক্তব্যসহ আরও কয়েকটি দাবিতে গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রঐক্য পরিষদ। এ সময় মিছিলের হামলার অভিযোগ ওঠে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হন পাঁচজন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর