শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভেড়ামারায় পুকুর ভরাট নিয়ে আওয়ামী লীগ-জাসদ উত্তেজনা

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শহরের বাসস্টান্ডে সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে দোকানপাট ও স্থাপনা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে ভরাট করা হচ্ছে শতবর্ষী পুকুর। এসব নিয়ে উত্তেজনা চলছে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে।

ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি অবস্থান নিয়েছেন পুকুর ভরাট না করার পক্ষে। আর ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল জাসদ নেতা। তিনি সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করছেন। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করছেন। পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না মুখে বললেও তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পুকুরের অর্ধেকের বেশি জায়গার ওপরে উঠবে মার্কেট। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ-জাসদের মধ্যকার পুরনো দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে বাদানুবাদ হয়েছে দুই নেতার মধ্যেও।

ভেড়ামারা ও মিরপুর এ দুই উপজেলা জাতীয় সংসদের কুষ্টিয়া-২ আসনভুক্ত। এ আসনের সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি মহাজোটে আসন বণ্টনের অংশ হিসেবে প্রার্থী হন এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে জয়লাভ করেন। শক্তির বিচারে ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ প্রায় সমান হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ লেগে আছে দুই দলে। এরই প্রভাব এসে পড়েছে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে।

ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, ভেড়ামারার সব মানুষ চায় সড়কটি প্রশস্ত হোক।

এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী নিজ থেকেই তাদের দোকানের সামনের অংশ ভেঙে নিয়েছেন। কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন নেই তারও বেশি জায়গা রেলওয়েকে দিয়ে ভেঙে উচ্ছেদ করিয়ে নিয়েছে পৌরসভা। ওই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের নামে রেলওয়ের শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। এতে মোটা টাকার বাণিজ্য হবে বলে মনে করেন তিনি। মিঠু বলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে এ পুকুর ছাড়া নেভানোর পানি পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া পরিবেশ সুরক্ষার চিন্তা থেকে এ পুকুর ভরাট করতে দেওয়া হবে না।’

গত ৯ অক্টোবর ভেকু দিয়ে উচ্ছেদ করা হয় ভেড়ামারা বাসস্ট্যান্ড সড়কের দুই পাশের দোকান ও স্থাপনা। উচ্ছেদ হওয়া দোকানি শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত হোক তা আমরা সবাই চাই। কিন্তু ৫ ফুট লাগবে বলে শুরু করে সব ভেঙে দিল এ কেমন কথা!’ আরেক দোকানি আবদুস সালাম বলেন, ‘যতটুকু ভাঙবে তা পেছনের দিকে সরিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পুনর্বাসন করতে বলেছেন। কিন্তু রেলওয়ের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা নূরুজ্জামানের যোগসাজশে মেয়র টুটুল আমাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। আমাদের বেশি জায়গা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’

এদিকে ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। এর জন্য পৌরসভার অনুকূলে ১ দশমিক ১৬ একর জমি বাণিজ্যিক লিজ নেওয়া হয়েছে। যাদের দোকান উচ্ছেদ হয়েছে রেলওয়ে তাদের পুনর্বাসনের শর্ত দিয়েছে। তাই পুকুরের পাড়ে মার্কেট করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করে উন্নয়নকাজে বাধা দিচ্ছে।’

তিনি পুকুর ভরাট হবে না বললেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পুকুরের মধ্যেই পাকা স্থাপনার পিলার তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এ পুকুর আগেই দখলে ছিল। এখন উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেখি মাটি ভরাটের মতো মনে হচ্ছে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘পুকুর ভরাট হবে না, বরং এখানে নোংরা পানির বদলে স্বচ্ছ পানির আধার সৃষ্টি করা হবে।’

আর ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে বলেন, ‘৫ মিটার ১০ মিটার বলে কিছু নয়; রেলওয়ে নকশা অনুমোদন করে দিয়েছে সেইমতে উচ্ছেদ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা লাইসেন্স ছাড়া ছিল তাদের সমস্তটুকু এবং যারা কৃষি লিজি ছিল তাদেরও বাণিজ্যিক লিজের আওতায় আনছে রেলওয়ে। সে কারণেই সব স্থাপনা ভাঙা হয়েছে।’

ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু ১৫ অক্টোবর পুকুর ভরাটের অবস্থা দেখেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়রের কথা ছিল ৫ ফুট হোক, ১০ ফুট হোক, ১৫ ফুট হোক দোকান ভেঙে পেছনে দোকান সরিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী ভাইদের দোকান নির্মাণ করে দেবেন। সে সুযোগে এখন দেখছি অতিরিক্ত জায়গা লাগবে বলে পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন।’ এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল। তিনি সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানকে নকশা ও ম্যাপ দেখাতে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত কথা বিনিময় হয়।

পুকুর ভরাট না করতে পরিবেশ অধিদফতরে লিখিত আবেদন করেও প্রতিকার মিলছে না বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ভেড়ামারা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুকুল। তিনি বলেন, ‘পুকুর ভরাট করা হচ্ছে সরকারের জলাশয় ভরাট আইন লঙ্ঘন করে।’

সর্বশেষ খবর