সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হামাসের ফাঁদে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত, ট্যাংক ধ্বংস

প্রতিদিন ডেস্ক

অবরুদ্ধ গাজায় ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন কাস্সাম ব্রিগেডের হামলায় আরও পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত ও দুটি ইসরায়েলি ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় অবস্থিত তাদের একটি কার্যালয়ে ইসরায়েলি বাহিনী রাতভর গোলাবর্ষণ করেছে। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, স্পুৎনিক। ইসরায়েলের সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, গাজার একটি টানেলে বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। সূত্র বলছে, আল-কাস্সাম ব্রিগেডের ফাঁদে পড়ে তাদের প্রাণ গেছে।

প্রতিরোধ সংগ্রামীদের টানেল মনে করে দখলদার সেনারা সেখানে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং তারা হতাহত হয়। এ ছাড়া গাজার অন্য এক স্থানে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের হামলায় অপর এক ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারায়। এর আগে শনিবারও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের দুই সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছিল। এদিকে, গতকাল হামাসের আল-কাস্সাম ব্রিগেডের সদস্যদের হামলায় দুটি ইসরায়েলি ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে। গাজার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ‘ইয়াসিন-১০৫’ রকেটের সাহায্যে এসব ট্যাংক ধ্বংস করা হয়। এর কয়েক দিন আগেই হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা জানিয়েছিলেন, তাদের মুক্তি সংগ্রামীরা ১৬০টির বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধযান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে বহু ট্যাংক রয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সমর্থনে ইসরায়েলের ভিতরে কমান্ডো হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের হামলা আরও চালানো হবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। ইরাকের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম সহযোগী গোষ্ঠী এই ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গতকাল টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, ইসরায়েলের এইলাত শহরে তারা উপযুক্ত অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।

 বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের শিশু, নারী এবং বৃদ্ধসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানোর অপরাধে এইলাত শহরের অবৈধ ইহুদি বসতিতে হামলা চালানো হয়। শত্রুর ঘাঁটিতে এরকম হামলা অব্যাহত রাখা হবে। খবরে আরও বলা হয়, গত তিন নভেম্বর এইলাত শহরে সর্বপ্রথম ইরাকি যোদ্ধারা হামলা চালায়। সে সময় তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিল, দুটি ড্রোন দিয়ে তারা হামলা চালিয়েছে এবং এটি শুরু মাত্র, গাজায় বর্বর আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় তারা ফিলিস্তিনি আন্দোলন হামাসের ব্যবহৃত ১৫০টিরও বেশি ভূগর্ভস্থ টানেল এবং কমপ্লেক্স ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এ বিষয়ে আইডিএফ মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা ১৫০টিরও বেশি টানেল ভেঙে দিয়েছি, এর বেশির ভাগেই বিস্ফোরক ছিল।’

অপরদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলে অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এতে ছয়জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ব্যাপারে ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর হামলায় আহতরা সবাই ইসরায়েলের ইলেকট্রিক করপোরেশনের কর্মী। ডোবেব কমিউনিটি অঞ্চলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। লেবানন সীমান্ত থেকে এটি আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘটনার পর ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের হিজবুল্লাহর অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।

গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ইউসুফ আবু রিশ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বর্বর বিমান হামলায় গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আশ-শিফার কার্ডিয়াক বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদাররা কার্ডিয়াক ভবনটি একদম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে এবং এর আশপাশে প্রচ- সংঘর্ষ চলছে। বর্তমানে হাসপাতালটি ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। হাসপাতালটি এরই মধ্যে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে আছে। হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মাদ আবু সালমিয়া বলেন, ১৫ হাজার মানুষ এই হাসাপাতালে রয়েছেন তাদের কেউ রোগী আবার কেউ আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তু। তারা সবাই এখন এই হাসপাতালে আটকা পড়েছে। আল-শিফা হাসপাতালের অবস্থা সম্পর্কে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালের কার্ডিয়াক ওয়ার্ড ধ্বংস করে দেওয়ার পর অন্যান্য ওয়ার্ডের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওইসব ওয়ার্ডের কোনো খবর তার কাছে নেই। এ ছাড়া জ্বালানির অভাব এবং বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আল-কুদস হাসপাতালটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) পরিচালক আচিম স্টেইনার সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, ইউএনডিপি কার্যালয়ে শনিবার গভীর রাতে হামলা চালানো হয়েছে। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটরা) এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গত রাতে আমাদের গাজা কার্যালয়ে বোমা হামলা চালানো হয়। কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আসা লোকজন হতাহতের শিকার হয়েছেন।’ এদিকে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হাসপাতালগুলোতেও হামলা চালানো হচ্ছে। এর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা। উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ হাজার ৭৮ জন, যার মধ্যে ৪ হাজার ৫০৬ জনই শিশু। আর আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ হাজার ৪৯০ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ২ হাজার ৭০০, যার মধ্যে দেড় হাজারই শিশু। অন্যদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৮৩ জন, যার মধ্যে ৪৪ জনই শিশু। আহত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। এদিকে গতকাল সিরিয়ার কয়েকটি অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কয়েকটি জঙ্গিবিমান রবিবার সকালে সিরিয়ার বিভিন্ন অবকাঠামোর ওপর হামলা চালিয়েছে। সিরিয়া থেকে অধিকৃত গোলান মালভূমি লক্ষ্য করে কয়েকটি রকেট ছোড়ার পর এই হামলা চালানো হয়।        

সর্বশেষ খবর