বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিয়ের চাপ, বালিশ চেপে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার বংশাই নদীতে ভাসমান অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ শনাক্তসহ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যাকান্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা। ভাসমান মৃতদেহটি ছিল দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আবদুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুনের (২৪)। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ১০ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয় হত্যাকান্ডের মূলহোতা এনামুল সানা (২৭) ও লাশ গুমের জন্য সানাকে সহযোগিতাকারী সোহাগ রানা (২৮)।

তাদের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীতে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো ঘটনা সাংবাদিকদের অবহিত করেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ৯ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌপুলিশ ও র‌্যাবকে অবহিত করে। র‌্যাব-৪-এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে। যেভাবে হত্যা : র?্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে এনামুল ও রুবিনার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। রুবিনা বিয়ের কথা বললে এনামুল অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশে রুবিনার মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র?্যাব জানায়, নিহত রুবিনা খাতুন নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। গত ৬ মাস আগে গ্রেফতার এনামুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিহত রুবিনার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেফতার এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি গার্মেন্টে সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালান। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন। খন্দকার আল মঈন বলেন, ৩ ডিসেম্বর গ্রেফতার এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। সুযোগ বুঝে রুবিনা খাতুনকে তার আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে এনামুল। বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখে। বাসায় অবস্থানকালীন সময় রুবিনা এনামুলকে বারবার বিয়ের কথা বললেও এনামুল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। ৮ ডিসেম্বর বিকালে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এনামুল। র‌্যাব জানায়, ভয়ংকর এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে তার বাসায় ডেকে নেয়। রাত ৩টার দিকে তারা দুজন রুবিনার মৃতদেহটি চাদরে প্যাঁচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনে। এরপর মৃতদেহটি মোটরসাইকেলে এনামুলের পিছনে বসিয়ে তার পেছনে বসে সোহাগ লাশটি ধরে রাখে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বংশাই নদীর ওপর রাঙ্গামাটিতে গিয়ে মৃতদেহটি তারা নদীতে ফেলে দেয়। এরপর তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করে। তাদের ধারণা ছিল, লাশটি খুঁজে পাওয়া গেলেও কেউ হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারবে না। জানা গেছে, গ্রেফতার এনামুল একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার সোহাগ গত ২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি পেশায় একজন বাসের হেলপার। গ্রেফতার এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তার যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতেন। ইতিপূর্বে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় কারাভোগ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর