রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিলেটে বন্ধ পাথর আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটে বন্ধ পাথর আমদানি

চার মাসের ব্যবধানে সিলেটের সবকটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানিকৃত সব ধরনের পাথর ও চুনাপাথরের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর বাড়তি শুল্ক দিতে নারাজ আমদানিকারকরা। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে সিলেটের দুটি স্থলবন্দর ও পাঁচটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পাথর লোড-আনলোড, পরিবহন ও ভাঙার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্ধলাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে দাবি ব্যবসায়ীদের। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার না হলে সিলেটের সবকটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন তারা। আমদানিকারকরা জানান, সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের বেশ কয়েকটি পাথর ও চুনাপাথর খনি রয়েছে।এসব খনি থেকে পাথর উত্তোলন করে কম পরিবহন খরচে সে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে রপ্তানি করেন। ফলে দেশের অন্যান্য স্থল ও শুল্ক স্টেশনের চেয়ে সিলেট দিয়ে কম মূল্যে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হয়। কিন্তু কাস্টম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে নারাজ। তারা সিলেট দিয়ে আসা পাথরের ডিউটি (ইমপোর্ট অ্যাসেসমেন্ট রেট) দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে একই করার চেষ্টা করছেন। এতেই বিপত্তি বেধেছে। আমদানিকারকরা আরও জানান, গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে এনবিআর টনপ্রতি ২ ডলার ডিউটি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিলে কয়েক দফা বৈঠক শেষে প্রতি টনে ডিউটি সাড়ে ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১১.৭৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এদিকে চার মাসের ব্যবধানে ৪ জানুয়ারি সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলো দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথর, ভাঙা পাথর ও চুনাপাথরের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করতে সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি বর্ধিত শুল্কারোপ শুরু হয়। এনবিআরের নির্দেশে আরও ২ ডলার করে বাড়তি শুল্কারোপ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে ফের শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে সব ধরনের পাথর আমদানি বন্ধ করে দেন।

এদিকে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোড-আনলোড, পরিবহন ও ক্রাসার মেশিনের অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। গতকাল ভোলাগঞ্জে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে আমদানি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে তারা।

সিলেট বিভাগীয় স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশনের ব্যবসা পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন বলেন, ‘চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো শুল্ক বাড়ানো অযৌক্তিক। ব্যবসায়ীরা আগের শুল্ক ধরেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাথর ও চুনাপাথর সরবরাহের চুক্তি করেছেন। কিন্তু এখন শুল্ক বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এ ছাড়া এনবিআর সারা দেশের পাথর আমদানির সঙ্গে সিলেটকে সমন্বয় করতে চাইছে। এটাও অযৌক্তিক। কারণ সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের পাথর খনিগুলোর অবস্থান। যে কারণে সিলেটের দুটি স্থলবন্দর ও পাঁচটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে কম মূল্যে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি করা হয়। তাই অন্য স্টেশনের সমান সিলেটের শুল্ক নির্ধারণ কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা মেনে নেবে নান। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে সিলেটের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ এমদাদ হোসেন আরও জানান, সিলেটের স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন আমদানিকৃত পাথর ও চুনাপাথর থেকে সরকার প্রায় আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করত। আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায়ও ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, সারা দেশে যে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু আছে তার সর্বনিম্ন হার সিলেটে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা আইন মেনেই করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর