বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার যুবক উদ্ধার, গ্রেফতার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপহরণের পর ভারতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে বাংলাদেশি এক যুবককে। নির্যাতনের সেই ভিডিও ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ২ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ৩০ লাখ টাকা না দিলে অপহৃত ব্যক্তির হাত কেটে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। গতকাল সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। র‌্যাব জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের মেঘালয়ে বাংলাদেশি যুবক কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে হিমেলকে গাছে বেঁধে মারধর করছে অপহরণকারীরা।

হিমেলের পরিবার বলছে, গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে গ্রামের বাড়ি শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে ড্রাইভার সামিদুলকে নিয়ে প্রাইভেটকারে বের হয়ে নিখোঁজ হন হিমেল। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে হিমেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে বন্ধ পায় তার মা তহুরা হক। অনেক খোঁজ করে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেন। এরপর একটি মোবাইল ফোনের নম্বরের সূত্র ধরে মাঠে নামে র‌্যাব ও ডিবি। তারা বলছেন, যে মোবাইল নম্বর থেকে ভিডিও পাঠানো হয়েছিল সেটি ভারতীয়। গোয়েন্দা পুলিশ এ ব্যাপারে ভারতের পুলিশের কাছে তথ্য পাঠায়। পরে ওই নম্বরটির সিম সরবরাহকারী ভারতীয় এক নাগরিককে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ভারতের মেঘালয় থেকে একটি ভারতীয় নম্বর থেকে হিমেলের মাকে ফোন করে বলে তোমার ছেলেকে আমরা অপহরণ করেছি, ২ কোটি টাকা দাও। পরে তারা ৩০ লাখ টাকার কথা বলেছে। হুমকি দেয় টাকা না দিলে তারা হিমেলের হাত-পা কেটে ফেলবে। এর প্রেক্ষিতেই ভিকটিমের মা প্রথমে জিডি এবং পরে মামলা করেন। গ্রেফতার সেই ভারতীয় নাগরিকের দেওয়া তথ্য ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে ডিবি সারা দেশের কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে।

ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গাজীপুরের বাসন থানা এলাকা থেকে ভুক্তভোগী হিমেলের প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি সেখানে রেখেছিল আসামি মাসুদ। গত মঙ্গলবার বিকালে শরীয়তপুরের গোঁসাইহাট থানার প্রত্যন্ত চর থেকে আসামি মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণ চক্রান্তে জড়িত রুবিনা ও কামরুন্নাহারকে ঢাকার তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যে অভিযান চালিয়ে মানিক মিয়া এবং মোবারক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। র‌্যাব দাবি করছে, এ ঘটনায় অপহরণ চক্রের মূলহোতা আবদুল মালেকসহ পাঁচজনকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকি জব্দ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর