রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সমীক্ষা

এক বছরে ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

♦ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০.২ শতাংশই মেয়ে ♦ বেশি আত্মহনন করেছে স্কুলগামীরা ৪৪.২%

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৩ সালে সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর আত্মহননের চিত্র উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এ সমীক্ষা বলছে, সব থেকে বেশি আত্মহত্যা করেছে নারী শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষার স্তর বিবেচনায় আত্মহত্যার হার বেশি স্কুলগামীদের।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের আত্মহত্যার এই চিত্র তুলে ধরেন আঁচলের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী। তিনি বলেন, গত বছর আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ২০৪ জন, নারী ৩০৯ জন। ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেন ৫৩২ জন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী (৪৪.২০%) আত্মহত্যা করেন। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.২%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১%) এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৪%)। সমীক্ষায় জানা যায়, গত বছর ঢাকা বিভাগে ১৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, বরিশাল ও রংপুর বিভাগে ৪৩ জন করে, ময়মনসিংহে ৩৬ জন ও সিলেটে ১২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ২০২৩ সালে আত্মহনন করা মোট শিক্ষার্থীর ৬০.২% মেয়ে। সমীক্ষায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে স্কুলপর্যায়ে। মোট শিক্ষার্থীর ৪৪.২% স্কুলগামী গত বছর আত্মহত্যা করেছে। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.৩%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ১৮ জন (১৯.১%) ও মাদরাসার শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৫%)। আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, বয়ঃসন্ধিকালে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ সময়টাতে বেশি রাগ-অভিমানের প্রবণতাও থাকে। গত বছরের চিত্রে দেখা যায়, ১৩-১৯ বছর বয়সী ৩৪১ শিক্ষার্থী (৬৬.৫%) আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ২২২ জনই মেয়ে; বিপরীতে ছেলে ১১৯ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর বয়সে হরমোনজনিত কারণে শিক্ষার্থীরা বেশি আবেগপ্রবণ থাকে। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি থাকে। আত্মহত্যা কমাতে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। সুপারিশগুলো হলো, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে মেন্টর নির্ধারণ এবং উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় মেন্টাল হেলথ কর্নার চালু করা, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতা শেখানো, নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের কৌশল, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যার আলামত সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করা।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর