বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিভাগে তালা, মহাসড়ক অবরোধ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় বিভাগীয় প্রধানসহ অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। নয় দিনেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় গতকাল আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দিনভর বিক্ষোভ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টোরিয়াল বডির অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থী। এতে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এদিকে, দুপুরের দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা দেড়টার দিকে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ভিসির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

পরে বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা অন্তত দেড় ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ভিসিসহ অন্যরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে সড়কে গেলে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের স্লোগান বন্ধ করে এবং ভিসির আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে এসে গতকালকের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে তালা দেওয়া হয়েছিল। ওই দুই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাজন সাহার নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও বাধ্যতামূলক ছুটির চিঠি পেয়েছি। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলছি। পরে আপনার সঙ্গে কথা বলব বলে ফোন রেখে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংকের শাখাসহ সব বিভাগে তালা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীরা ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসে সব বিভাগের তালা খুলে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ন কবীর বলেন, আমিও তদন্ত কমিটির একজন সদস্য। যৌন হয়রানির ঘটনায় তদন্ত কাজ চলছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আমার একার সিদ্ধান্তে তো শিক্ষকদের বহিষ্কার করা যাবে না। আগামীকাল সিন্ডিকেটের সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেওয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করে গত ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করে ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ খবর