সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

লিবিয়ায় অপহরণ, পরিবার দিশাহারা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

জীবিকার সন্ধানে লিবিয়ায় পাড়ি জমানো লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের চার শ্রমিক অপহৃত হয়েছে এমন খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাদের পরিবারে। অপহৃত চার শ্রমিকের বাড়িতে নেই ঈদের আনন্দ। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তাদের হত্যা শেষে লাশ গুমের হুমকি পেয়ে দিশাহারা পরিবারের লোকজন। অপহৃত শ্রমিকরা হলেন- লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের জামাতা ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙার ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০), রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তার খালাতো ভাই ও পঞ্চগ্রামের রামরাম গ্রামের শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪)। এরা সবাই লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। প্রায় তিন বছর আগে ধারদেনা করে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব প্রায়। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অপহরণকারীদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা বাংলাদেশে থাকা অপহরণকারী চক্রের বিকাশ নম্বরে না দিলে ওই চার শ্রমিককে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকিতে এখন দিশাহারা অসহায় পরিবারগুলো। সরেজমিন লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র কৃষক জয়নাল আবেদিনের (৬০) বাড়িতে ভাঙাচোরা দোচালা টিনের ঘর। তিন বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে ৫ লাখ টাকায় ছেলে আল আমিনকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন তিনি। ছেলের সঙ্গে তার জামাতা হাফিজুল ইসলামও লিবিয়ায় পাড়ি জমান। এ সময় কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, তিন বছর পর হঠাৎ গত ১১ মার্চ সকালে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি তার ইমো নম্বরে ফোন করেন।

 এ সময় জানানো হয়, তার ছেলে আল আমিন ও জামাতা হাফিজুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নইলে তাদের দুজনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করছে।

এদিকে ছেলে ও জামাতা অপহরণের খবর পাওয়ার পর থেকেই শয্যাশায়ী জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম। দিনরাত কান্নাকাটি করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসুস্থ আলেয়া বেগম জানান, তার ছেলে ও জামাতাকে গ্রামের আবদুল মোন্নাফের ছেলে লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের মাধ্যমে সেখানে পাঠানো হয়েছে। তার অভিযোগ এই অপহরণের সঙ্গে মিজানুর জড়িত আছেন। মিজানুরের লোকজন অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে মুক্তিপণের টাকা দাবি করছেন। ‘এখন এই টাকা কই পাব, কেমনে জোগাড় করব? আমরা অনেক অভাবে আছি। টাকা না দিলে ওরা তো মারি ফেলাইবে’- বলেই উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ফেলেন তিনি। এদিকে সাংবাদিকদের আসার খবর শোনে লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামরাম গ্রামে জড়ো হন লিবিয়ায় অপহরণের শিকার চার শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। জানা যায়, স্বামী অপহরণের শিকার হওয়ার পর থেকে জয়নাল আবেদিনের মেয়ে জয়নব বেগম (৩৫) বাবার বাড়িতে আছেন। অপরদিকে পঞ্চগ্রামের পাশেই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ভীম শর্মা গ্রামের আল আমিন নামে আরেকজন দুই বছর আগে লিবিয়ায় পাড়ি জমায়। আল আমিনের বড় ভাই লিটন মিয়া (২৩) জানান, গত ১১ মার্চ সকালে একটি নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, আমার ভাই আল আমিন, খালাতো ভাই রাকিবুল, সিন্দুরিয়া গ্রামের আরেক আল আমিন, তার ভগ্নিপতি হাফিজুলকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদেরকে জীবিত দেখতে চাইলে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দিতে হবে। পুলিশকে জানালে তাদের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

লিটন অভিযোগ করে বলেন, এর পেছনে পঞ্চগ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফের লিবিয়াপ্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের রামরাম গ্রামের সামসুল হকের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী মো. নাজমুল হুদা (২৩) এবং একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে লিবিয়া প্রবাসী মো. সুলতান (৩২) জড়িত আছেন। তিনি লালমনিরহাট সদর থানায় পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন।

লালমনিরহাট পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে অভিযুক্ত আবদুল মোন্নাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা এসব মিথ্যা কথা বলছেন। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিনিও শুনেছেন, গ্রামের কয়েকজন লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছেন।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুহুল আমিন জানান, ‘লিবিয়ায় মুক্তিপণের জন্য শ্রমিকদের অপহরণের বিষয়ে দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত চলছে। দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর