সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

চালকের দক্ষতায় রক্ষা পেল দুই ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল। উভয় ট্রেনের চালকের দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং পারস্পরিক আলোচনায় দুটি ট্রেনই মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল।

স্টেশন মাস্টারের ভুল সংকেতে গত শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের লোহাগাড়া থেকে চকরিয়া অংশে এ দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনা ঘটলে জানমালসহ ট্রেনের ভয়াবহ ক্ষতি হতো বলে ধারণা করছেন রেলের কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় স্টেশন কক্সবাজারের চকরিয়া স্টেশন মাস্টার আজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। কক্সবাজার এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল এবং পর্যটক এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাচ্ছিল। উভয় ট্রেনেই প্রায় ৮০০ যাত্রী ছিল। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, স্টেশন মাস্টার ভুল সংকেত দেওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল। তবে লোকো মাস্টারসহ (ট্রেনচালক) অন্যরা তা দ্রুত বুঝতে পারেন। এ জন্য তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। দায়িত্বে অবহেলার কারণে চকরিয়ার স্টেশনমাস্টারকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। স্টেশন মাস্টার আজিম উদ্দিন বলেন, দায়িত্বে কোনো অবহেলা করা হয়নি। আর যেভাবে বলা হচ্ছে ঘটনা তেমন নয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটত না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস চকরিয়া স্টেশনে এসে পৌঁছায় দুপুর ১টা ২২ মিনিটে। চকরিয়া স্টেশন মাস্টার কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে চকরিয়া থেকে লোহাগাড়া যাওয়ার জন্য সংকেত দেন। যদিও চকরিয়া স্টেশন থেকে হারবাং স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে, লোহাগাড়া স্টেশন মাস্টার পর্যটক এক্সপ্রেসকে লোহাগাড়া থেকে হারবাং স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সংকেত দেন। রেলওয়ের পাহাড়তলী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও ওই দুই ট্রেনকে নির্ধারিত স্টেশনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও দুই স্টেশন মাস্টারের সংকেত পেয়ে দুই ট্রেনের লোকোমাস্টার ট্রেন চালাতে শুরু করেন। তবে পর্যটক এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রসুল কক্সবাজার এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার মো. জাহেদুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল করে ট্রেন কোথায় আছে জানতে চান। তখন জাহেদুল ইসলাম জানান, তিনি ট্রেন নিয়ে চকরিয়া থেকে লোহাগাড়ার দিকে রওনা দিয়েছেন। একইভাবে মোহাম্মদ গোলাম রসুলও জানান, তিনিও ট্রেন নিয়ে লোহাগাড়া থেকে হারবাং স্টেশনে যাচ্ছেন। ট্রেনের অবস্থান জানতে পেরে দুই লোকোমাস্টারই বুঝতে পারেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। কারণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি মাত্র লাইন। যদি তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন থামানো না হয়, তাহলে মাঝপথে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটবে। তখন দুই ট্রেনের গতি ছিল ৫০ কিলোমিটার। তারা দ্রুত পাহাড়তলীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে দুই ট্রেনকেই থামার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পর্যটক এক্সপ্রেসের লোকো মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রসুল বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও স্টেশন মাস্টারদের সংকেত ও নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেন চালিয়ে থাকি। কিন্তু ওই দিন কী মনে করে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার জাহেদকে মুঠোফোনে কল দিই। তখন কোন স্টেশনে আছে, কোথায় ক্রসিং হবে এগুলো জানতে চাই। এরপর জাহেদ জানান, লোহাগাড়ার দিকে আসছে।  আমিও জানাই। এই খবর শুনে টেনশনে পড়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর ট্রেন থামিয়ে দিই। ওদিক দিয়ে জাহেদও ট্রেন থামিয়ে দেন। যদি ফোন না করতাম তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেত। এক ফোনের কারণে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি আমরা।

সর্বশেষ খবর