রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত তিন বছরে রপ্তানি ধীরে ধীরে কমলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও ডলার সংকট কিছুটা কেটে যাওয়ায় এই খাতে উন্নতি হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, গত ১০ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৭২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এই সময়ে প্রত্যাশা ছিল ৭৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারের। চলতি ২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয় ৮২ কোটি ৯২ লাখ ডলারের।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী কৃষিপণ্য রপ্তানির মধ্যে, গত ১০ মাসে চা রপ্তানি বেড়েছে ৬৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ। মসলা রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ড্রাই ফুড রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। তেলবীজ রপ্তানি বেড়েছে ১১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। পানপাতা রপ্তানি বেড়েছে ৭৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। চিনি এবং কনফেকশনারি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

রপ্তানির বাজারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের আধিক্য রয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য, ইইউ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সুপারশপে এখন বাংলাদেশের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দেখাও মেলে। এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই নতুন রপ্তানি খাত হিসেবে আশা দেখাচ্ছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য অথবা কৃষিজাত পণ্য দেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের একটি। করোনার পর ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবার এই খাতের রপ্তানি এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে এ খাতে রপ্তানি কমে যায়।

উদ্যোক্তারা জানান, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হয়। যার ফলে দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ ১৪৫টি দেশে কৃষি এবং কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, চা, শাকসবজি, তামাক, ফল, মসলা, শুকনো খাবার, তৈলবীজ, পান, প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া চর্বি ও তেল, চিনি ও মিষ্টি খাবার, পানীয়, স্পিরিট ও ভিনেগার এবং তেলসহ অন্যান্য পণ্য। আর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। প্রধান পণ্যগুলো রপ্তানি করা হয় মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ৬৩ মৌলিক প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ সাত শতাধিক কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এখনো সম্ভাবনা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারিনি। এই সময়ে রপ্তানি আরও বাড়ার কথা। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় এখনো এ খাতে রপ্তানি বাড়ছে না। এ খাতে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের খরচ বেশি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এক্ষেত্রে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। তাদের পরিবহন ব্যয় আমাদের তুলনায় অনেক কম। এ কারণে তারা বাজার ধরতে পারছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের কার্গো স্পেস পাওয়া যায় না। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে আমাদের খরচ বেড়েছে। আনঅফিশিলালি বিভিন্ন সরকারি অফিসে আমাদের ব্যয় বেড়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা না থাকলে রপ্তানি এখন ডাবল হওয়ার কথা।

সর্বশেষ খবর