বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

নামের মিল থাকায় কলেজছাত্র কারাগারে, মূল আসামি ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে ‘নামের মিল থাকায়’ এক কলেজছাত্রকে মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। সোমবার ইসমাইল হোসেন (২১) নামে ওই কলেজছাত্রকে আটক করেন উপপরিদর্শক আতিকুর রহমান। এরপর মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন।

কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. মনোয়ারা বেগম। ইসমাইল গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার ভাই আবদুল হাকিম রুবেল বলেন, ‘গত রবিবার এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বাড়ি আসেন। তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে ইসমাইলকে ধরে নিয়ে যান। আমরা এসআইকে বারবার বলেছি তার নামে কোনো মাদক মামলা নেই। এ সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানার সঙ্গে গ্রাম, মায়ের নাম ও বয়স মিল নেই তা-ও দেখিয়েছি। এর পরও এসআই আতিক জোর করে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যান। পর দিন হেরোইন মজুদের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে ইসমাইল জেলে।’

রুবেলের অভিযোগ, যার নামে মামলা আছে, তার নামও ইসমাইল হোসেন (২০)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মাদক মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতের চেন্নাই গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির উপপরিদর্শক ইনামুল ইসলাম। পর দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার বাবা আবদুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই রয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ইমো অ্যাপসে যোগাযোগ করা হলে নিজে মাদক মামলার আসামি থাকার কথা স্বীকার করে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের দিয়ার মানিক চক গ্রামে। দুই বছর আগে আমরা লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেছি। এর পর থেকে সেখানে বসবাস করি।’ তিনি বলেন, ‘আমি গোদাগাড়ীতে থাকা অবস্থায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। এক বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হয়। ওই বন্ধুর মিথ্যা তথ্যে ডিবি পুলিশ আমাকে উপজেলা পরিষদের সামনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।’ ইসমাইল আরও বলেন, ‘আমার আগে থেকেই পাসপোর্ট করা ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে চেন্নাই চলে এসেছি।’

এদিকে ভুল আসামি ধরে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজছাত্র ইসমাইলের পরিবারের পক্ষ থেকে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিনসহ পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, ‘মূল আসামির সঠিক ঠিকানা পাওয়া গেছে। যাকে ভুল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তার জন্য আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করি তার জামিন হয়ে যাবে।’

গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা বলেন, ‘ভুলে গ্রেফতার কলেজছাত্র ছাড়া পেয়ে যাবেন। কীভাবে এ ধরনের ভুল হলো তদন্ত করে দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর