সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

রিমাল পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী

পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা-যমুনা পাড়ে শঙ্কায় কৃষক

প্রতিদিন ডেস্ক

রিমাল-পরবর্তী বরগুনার উপকূলে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বরগুনার সাগর উপকূলীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী। পটুয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ২ লাখ মানুষ সুপেয় ও ব্যবহার উপযোগী পানি না পাওয়ায় সেখানে হাহাকার চলছে। সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও লালমনিরহাটে তিস্তা ও বগুড়ায় যমুনার পানি বেড়েছে। ফলে এই দুই নদীপাড়ের কৃষকরা রয়েছেন শঙ্কায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-বরগুনা : রিমাল-পরবর্তী বরগুনার উপকূলে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁঁকিতে পড়েছে বরগুনার সাগর উপকূলীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী। প্রাথমিকভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর তাদের সীমিত জনবল আর সম্পদ ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর মো. রাইসুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারীরা বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, হাইজিনকিটস, সরবরাহের পাশাপাশি, মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে খাবার পানির ব্যবস্থা করছি। ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার উপযুক্ত করতে ব্লিচিং পাউডার দিচ্ছি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নলকূপ থেকে যে পানি উঠছে তার বেশির ভাগই দুর্গন্ধযুক্ত এবং পুকুরের পানিতে লবণ স্বাদ।

অনেক জায়গায় লেট্রিনের ময়লা পুকুরের পানিতে মিশে যাওয়ায় পানি ব্যবহারিক কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রিমালের তা বে পটুয়াখালীতে শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস আর ঝোড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে এবং বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে মানুষের বসতঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ৩৭ হাজার ৭৮১টি আধাপাকা ও কাঁচা বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮২টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯৯টি বসতঘর। বসতঘরে গাছ উপরে পড়ে আহত হয়েছেন নারী ও শিশুসহ মোট ৪৬ জন এবং নিহত হয়েছেন তিনজন। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নগদ অর্থ ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ইতোমধ্যেই ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জে নিরাপদ পানির জন্য ২ লাখ মানুষের হাহাকার : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ২ লাখ মানুষ সুপেয় ও ব্যবহার উপযোগী পানি পাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় রিমালের জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এ উপজেলাটির পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নের সব জলাধারে প্রবেশ করেছে সমুদ্রের লবণ পানি। গাছপালা, পাতা, হাঁস-মুরগির মৃতদেহ, ড্রেন ও সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-আবর্জনা। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব পুকুরের পানি পচে রং কালচে হয়ে গেছে। গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকায় এখানে টিউবওয়েলের ব্যবহারও নেই বলইে চলে।

সুন্দরবনে বাড়ছে মৃতদেহের মিছিল : ঘূর্ণিঝড় রিমেলের তা বে লন্ডভন্ড সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর মৃতদেহের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সুন্দরবনের অভ্যন্তরসহ বিভিন্ন নদনদী ও চর থেকে ১৩৪টি বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা। উদ্ধার করা মৃত এসব বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে ১৩০টি হরিণ ও চারটি বন্য শূকর।

সিলেট : বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে সিলেট মহানগরের কিছু এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট : তিস্তা নদীর বুকে হঠাৎ পানি বেড়েছে, বেড়েছে পানির প্রবাহও। এ কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটে তিস্তার চরে চাষাবাদ করা লক্ষাধিক কৃষক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিগত তিন বছর ধরে ঠিক এমন সময়েই উজানের পানি ধেয়ে এসে বন্যায় ভেসে যায় তাদের কষ্টার্জিত সোনালি ফসল। এ বছরও সেই আশঙ্কাই করছেন চাষিরা।

পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা ব্যারাজের ৩২টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া : বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যমুনার ভাঙনের ফলে আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ। গত কয়েক দিনে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৬০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শিগগিরই ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চলতি মাসে বন্যার শঙ্কা : জুন মাসে দেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জুন মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে। সেখানে জুন মাসে তাপপ্রবাহ, বৃষ্টি, নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় এসব বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর