শিরোনাম
সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে

তদন্ত কমিটি গঠন দাফন সম্পন্ন

প্রতিদিন ডেস্ক

বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নিহতের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে নিহতদের দাফন-কাফন। চাওড়া নদীতে তলিয়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটি শনিবার গভীর রাতে চেইন কপ্পা দিয়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। তাতে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নির্মাণ করা লোহার সেতু ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাওয়া মাইক্রোবাসে যাত্রী ছিলেন ১৪ জন। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা ডুবে যাওয়া গাড়ি থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নয়জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, আমতলী উপজেলা কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে মরিয়ম বিল্লাহ হুমায়রার সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা. সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার ওই কনেকে বরের বাড়ি তুলে নেওয়া হয়। শনিবার মেয়ের পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রোবাস এবং অটোতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে মাইক্রোবাস ও অটো নদীতে তলিয়ে যায়। অটোতে থাকা যাত্রীরা সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যান। এ ঘটনায় বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অপর দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, চেইন কপ্পা দিয়ে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মাইক্রোবাসের মধ্যে আর কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। 

মাদারীপুরে একই পরিবারে নিহত সাতজনের দাফন সম্পন্ন : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের একই পরিবারের নিহত সাতজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে গতকাল। এ সময় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন।  জানা যায়, বৃহস্পতিবার আমতলীতে বোনের মেয়ে হুমায়রার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে যান শিবচরের ভদ্রাসনের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী টেলিটক চাকরিজীবী মুন্নী বেগম (৪০), দুই মেয়ে তাহিয়া (৭), তাসফিহা (১১)।

বুধবার শিবচরের একই ইউনিয়নের সাহাপাড়া গ্রামের বোন ফরিদা বেগম (৪০), ভাবী ফাতেমা বেগম (৪০), দুই ভাগ্নে মাহাবুব খান, সোহেল খান, তার স্ত্রী রাইতি (৩০), রাইতির মা রুমি বেগম (৪০) ওই অনুষ্ঠানে যান। শুক্রবার বিয়েতে সবাই অংশ নেন। শনিবার বৌভাতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে যায়। এতে  ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মুন্নী বেগম, দুই মেয়ে তাহিয়া, তাসফিহা, তার বড় ভাই বাবুল মাদবরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন ফরিদা বেগম, ফরিদা বেগমের ছেলে সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি বেগম, রাইতির মা রুমি বেগম নিহত হন। এদের সবার বাড়ি ভদ্রাসনের সাহাপাড়া ও চরপাড়া গ্রামে।

বেঁচে গেল ছয় মাসের শিশু : সড়ক দুর্ঘটনায় মা, নানি মারা গেলেও বেঁচে আছে ছয় মাসের শিশু সাবরিন। মেয়েকে নিয়ে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তার মা। শনিবার দুপুরে আমতলীর দুর্ঘটনায় সাবরিনের মা রাইতি খানসহ ৯ জন নিহত হন।

বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল তখন মা রাইতি তার কোল থেকে সাবরিনকে খালের ওপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেন। পেছনে একটি অটোরিকশায় সোহেলসহ দুজন আত্মীয় ছিলেন। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসতেই কচুরিপানার ওপর তার চোখ পড়তেই দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সন্তানকে পানিতে ভেসে থাকা কচুরিপানার ওপর থেকে উদ্ধার করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর