মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

যাত্রীর চাপ বিমান পথে ভাড়াও আকাশছোঁয়া

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

কারফিউয়ের কারণে বন্ধ সড়ক যোগাযোগ। চলছে না ট্রেনও। তাই জরুরি কাজে রাজধানী ঢাকায় যেতে সিলেটের মানুষের একমাত্র ভরসা আকাশপথ। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে কাটা যাচ্ছে না এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট। টিকিট কাটতে পারছে না ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ভিড় করছেন বিমানবন্দরে এয়ারলাইনসগুলোর কাউন্টারে। সুযোগ বুঝে এয়ারলাইনসগুলোও বাড়িয়ে দিয়েছে ভাড়া। দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে টিকিট। এর পরও আকাশছোঁয়া দামে মিলছে না টিকিট। অনেকেই বিমানবন্দর থেকে ফিরেছেন হতাশ হয়ে। কারফিউয়ের কারণে এখন সিলেট থেকে ঢাকায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম আকাশপথ। ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে টিকিট কাটার সুযোগ না থাকায় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ। একই কারণে এয়ারলাইনসের সেলস সেন্টারগুলো থেকেও টিকিট ইস্যু করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ছুটছেন বিমানবন্দরে। এয়ারলাইনসগুলোর বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে ‘ম্যানুয়েলি’ ইস্যু করা হচ্ছে টিকিট। তবে যাত্রীদের অভিযোগ এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো সুযোগ বুঝে ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। সিলেট থেকে প্রতিদিন ইউএস বাংলার পাঁচটি, বিমান বাংলাদেশের তিনটি, নভোএয়ার ১টি ও এয়ার এস্ট্রার ১টি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সমান সংখ্যক ফ্লাইট ঢাকা থেকে আসে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সিলেট-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সর্বনি¤œ ভাড়া ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর বেসরকারি সব এয়ারলাইনসের সর্বনিম্ন ভাড়ার পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫ হাজার টাকা। সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে টিকিট ইস্যুর জন্য যাত্রীদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এয়ারলাইনসগুলোর বিমানবন্দর কাউন্টার। এ সুযোগে সব এয়ারলাইনস বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের ভাড়া। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো ৬ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করছে সিলেট-ঢাকা রুটের টিকিট। জরুরি কাজে যারা পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের কাউন্টারে টিকিট কাটতে যাচ্ছেন তারা বাড়তি ভাড়া শুনে পড়েছেন বিপাকে। ভাড়ার পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় অনেকে পরিবার নিয়ে ফিরে আসছেন বিমানবন্দর থেকে। বাড়তি ভাড়া নিয়ে বিমানবন্দরে এয়ারলাইনসের কাউন্টারগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসার ঘটনাও ঘটছে। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিদেশ যাত্রীরা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় সিলেট থেকে ঢাকায় গিয়ে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ধরতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইন্টারনেট না থাকায় এয়ারলাইনসগুলোর সার্ভার বন্ধ। যে কারণে কোন ফ্লাইটে কয়টি সিট খালি আছে সেটাও দেখা যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি টিকিট ইস্যু করতে হচ্ছে। যে কারণে ঢাকা থেকে যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে সেটাই যাত্রীদের কাছে থেকে নিতে হচ্ছে।

এদিকে, কারফিউয়ের কারণে অগ্রিম টিকিট কেটে রাখা অনেক যাত্রী তাদের ভ্রমণের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় টিকিট বাতিল করতে পারেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস ওই যাত্রীর ভ্রমণ বাতিলের তথ্য না পাওয়ায় তা অন্য যাত্রীর কাছে ওই সিট বিক্রি করতে পারছে না। এতে ফ্লাইট ছাড়ার সময় অনেক সিট খালি রেখেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে উড়োজাহাজগুলোকে।

যেসব যাত্রী ঢাকা থেকে সিলেট ফিরছেন তাদেরকেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল জানান, দুপুরে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে এসেছেন। কিন্তু সাড়ে ১১ হাজার টাকায়ও সিলেট ফেরার টিকিট পাচ্ছেন না।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ওসমানী বিমানবন্দরের সহকারী ব্যবস্থাপক বেলায়েত আলী লিমন জানান, ম্যানুয়ালি টিকিট ইস্যুর কারণে এয়ারলাইনসগুলোকে কিছুটা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। তবে যাত্রীসেবা নিশ্চিতে ইউএস বাংলা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আগের দিন সাড়ে ১১ হাজার টাকায় সিলেট-ঢাকা রুটের টিকিট বিক্রি হলেও গতকাল সোমবার ৬ হাজার টাকায় যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর