সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব শিক্ষক নেটওয়ার্কের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ সময় নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি প্রাথমিক প্রস্তাব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এ প্রস্তাবকে আরও বিস্তৃত করতে কাজ করবে। এতে প্রথমে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান ও মোশাহিদা সুলতানা। নেটওয়ার্কের পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ‘রূপান্তরের রূপরেখা’ প্রস্তাব তুলে ধরেন। নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তারা একটা ভয়ংকর সময় পার করছেন। একই সঙ্গে তারা একটা অসাধারণ সৃষ্টিশীল সম্ভাবনাময় সময়ও পার করছেন। তারা ভয়ংকর দমনপীড়ন দেখছেন। তারা অসাধারণ প্রতিরোধও দেখছেন। গণঅভ্যুত্থান অনেক দেখেছেন, কিন্তু মাত্র ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এত প্রাণহানি বাংলাদেশ আর কখনো দেখেনি।

 বর্তমান আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারের প্রশ্নে আটকে নেই। জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন এক গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে।

 বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি এখন শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফায় এসে ঠেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ‘রূপান্তরের রূপরেখা’ প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, অবিলম্বে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে নাগরিক-রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।

রূপান্তরের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়। এ ধরনের ছায়া সরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রস্তাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করবে, সেগুলোও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জুলাই হত্যাকান্ড ও জনগণের ওপর নৃশংস জোরজুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারে জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করা হবে। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে। সরকার গঠনের ছয় মাসের মধ্যে একটি সাংবিধানিক পরিষদ (কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি) গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচিত সাংবিধানিক পরিষদ এমন এক গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রস্তাব করবে, যে সংবিধানে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জনবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক কোনো ধারা থাকবে না। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না, বরং অবনতি হবে। সরকার যত দ্রুত পদত্যাগ করবে, তা দেশের জন্য, তাদের নিজেদের জন্যই ভালো। গণভবন খোলা বলা হচ্ছে, এটি ১৪ জুলাই খোলা হলে এত রক্তপাত হতো না। আমরা আশা করি, সরকার আর জটিলতা সৃষ্টি না করে দ্রুত পদত্যাগ করবে।

সর্বশেষ খবর