শিরোনাম
১০ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৭:৫২

ভালো পুলিশ মন্দ পুলিশ

হাসিনা আকতার নিগার

ভালো পুলিশ মন্দ পুলিশ

পুলিশ- শব্দটা শুনলেই কেমন যেন একটা নেগেটিভ ধারনা কাজ করে আমাদের দেশের  মানুষের মনে। পুলিশ যে একটা পেশার পদবি তা ভুলে যায়। বরং মনে হয় পুলিশ সমাজের একটা ভিন্ন প্রজাতি। 

তবে এর পেছনে এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের বে আইনি কার্যক্রম অনেকটা দায়ী। দেশের মূল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে বুঝায় পুলিশ বাহিনীকে। কিন্তু অপরাধ রোধ করতে গিয়ে এ পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য তার সততা বা নিষ্ঠার জায়গাতে অনেক ক্ষেত্রে অনড় থাকতে পারেনা।  আর সে কারনে মন্দ পুলিশের আড়ালে হারিয়ে যায় ভালো পুলিশ।
সাম্প্রতিক কালে পত্রিকায় চট্রগ্রামের এস আই মাসুদুর রহমানের মানবতাবোধের খবর হতবাক করে দিয়েছে। খবরটা দেখে মনে হয়, পুলিশ সব সময় টাকার বিনিময়ে কাজ করে না। বরং তাদের বেতনের পয়সা দিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়ায় নিজের বিবেক মায়া মমতা থেকে। 
এস আই মাসুদুর রহমান রাস্তার পাশে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রোজিনা আর তার সন্তানের জীবন রক্ষা করেছে নিজের বিবেকের তাড়নায়। কোন এক নরপশুর যৌন লালসার শিকার মানসিক রোগী রোজিনা রাস্তার ধারেই জন্ম দেয় সন্তানের। নর্দমার পানি আর ধূলাবালিতে মাখা মুমূর্ষু মা ও শিশুকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে পুলিশ অফিসার মাসুদুর রহমান ছুটে আসে। শুধু তাই নয়, পরম মমতায় নবজাতকে কোলে তুলে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের। 

বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনে এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু এ কাজগুলো সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকে না। এর কারণ দুর্নীতির একটি চক্র কাজ করে এ বাহিনীতে।এর পাশাপাশি আইন আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের অনেক সদস্য নিজেদের ধনবান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ভুলে যায় তার দায়িত্ববোধ।

ভালোবাসা আর মন্দ বাসার মতো যদি পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে দেখা যাবে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটই ভালো পুলিশের চেয়ে মন্দ পুলিশ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

পুলিশ প্রশাসনে পোস্টিং প্রমোশন থেকে শুরু করে সকল প্রক্রিয়াতে রয়েছে লেন দেনের বিষয়। আবার তাদের বেতন ভাতা দিয়ে তারা নিজেদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরন করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা মাদক সন্ত্রাসসহ অন্যান্য অনৈতিক কাজে সহযোগী হয়ে পড়ে অপরাধীদের। যার কারণে সমাজের মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থা আনতে পারে না। থানায় যাওয়া মানে টাকা ছাড়া প্রতিকার পাওয়া যাবে না এটাই মনে করে। আর এ ধারণা যে অমূলক তা কিন্তু নয়।

তবে জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে বর্তমানে কাজ করছে উচ্চ পর্যায়ে। সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার শপথে অপরাধ দমন করতে হলে মন্দ পুলিশ নয় ভালো পুলিশ দরকার। 

পুলিশ অফিসার মাসুদুর রহমান যেমন করে রোজিনা আর তার সন্তানকে বাঁঁচিয়েছে, তেমন করে যদি পুলিশ সে নরপশুকে খোঁজে বের করতে পারত। যে রাতের অন্ধকারে হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে যৌন লালসা মিটাতে অসহায় নারীর উপর। কিংবা মিথ্যা মামলার ভয় ভীতি না দেখিয়ে প্রকৃত সন্ত্রাসী, মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো তবে পুলিশ নাম শুনে আতংকিত হত না মানুষ। বরং জনগণের বন্ধু পুলিশ- শ্লোগানটি পেতো ভিন্নমাত্রা।       

লেখক: কলামিস্ট

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর