২৫ মার্চ, ২০২০ ২০:০৯

প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা নেয় না মানুষ

হাসিনা আকতার নিগার

প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা নেয় না মানুষ

হাসিনা আকতার নিগার

মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষ। স্বজন হারানোর বেদনাতে পাশে নেই প্রিয়জন। কেবল বাঁচার আকুতি। একটা ক্ষুদ্র ভাইরাস সারা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সর্বশক্তিমান তার অতি প্রিয় মানব জাতিকে ভারসাম্যহীন এ পৃথিবীতে মহা পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছেন। মহা প্রলয়ের এ সময় মানুষ একে-অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কতটা অসহায় বোধ করে তা বুঝতে পারা উচিৎ। 

'মরিতে চাহিনা এ সুন্দর ভুবনে'- এ সকলের চাওয়া। তবে নিজের সুখ বিলাসিতা প্রতিপত্তি প্রভাব বজায় রাখতে সত্য ও ন্যায়ের পথে নেই সমাজ। ঘুষ, দুর্নীতি, মানুষকে শোষণ করা কিছুই থেমে নাই করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাতেও। বরং আতঙ্কিত সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। নিজের অসৎ উপায়ে গচ্ছিত টাকাকে নিরাপদ রাখতে ব্যতিব্যস্ত সমাজের কীটগুলো। অনুতাপ অনুশোচনা করে জীবনের হিসাব না করে একে অন্যের দোষ খুঁজতে ব্যতিব্যস্ত।

করোনাভাইরাস যদি মানুষেরও সৃষ্ট হয় তবু আত্মিকভাবে চিন্তা করলে একটা বিষয় পরিস্কার, এ ভাইরাস মানব জাতিকে শিক্ষা দিতেই উদ্ভব হয়েছে। যা স্রষ্টা বা প্রকৃতির নিয়মের ব্যতয় ঘটানোর প্রতিফলন। অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়  প্লেগ, গুটি বসন্ত, কালাজ্বর, সার্স, এইডস ও সোয়াইন ফ্লু মানুষকে ভীতিগ্রস্ত করেছে। এক একটা অসুখ মানুষকে তার জীবনের গতিবিধির সর্তকবার্তা দিয়েছে। 

নোবেল করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবার আগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা জরুরি। সব ধর্মে বলা হয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা। যে যেভাবেই প্রাত্যহিক ইবাদত করুক  না কেন তাকে শারীরিকভাবে পরিস্কার হয়ে নামাজ, পূজা ও প্রার্থনা করতে হয়। মানুষকে বাহক করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। আর এর থেকে বাঁচতে হলে পারস্পরিক যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। বিদেশ থেকে আপনজন এলে তাকে কাছে রাখা যাবে না অন্তত ১৪ দিন। মানসিকভাবে বিষয়টা পীড়াদায়ক। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী ঠেকাতে মনের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গরীব দিনমজুরদের চিন্তা অন্ন সংস্থান নিয়ে। কারণ তাদের ঘরে জমানো টাকা নাই।   

বাংলাদেশের উন্নত দেশের মত সক্ষমতা নেই। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাপনা এতটা সহজ নয়। কারণ দেশের মানুষের মাঝে সততা নিষ্ঠা ও সমন্বয়তা নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে যারা নিয়ে গেছে তারা দাঁড়াবে না গরীবের পাশে। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন শব্দগুলো গরীবের কাছে হতাশার শব্দ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বলতে গেলে নাজুক পরিস্থিতি। দুঃখজনক হলো, এ মুহূর্তে মানুষ সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিতে পারছে না। করোনাভাইরাসে মানুষ মরবে নাকি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি হবে তার কোন প্রস্তুতি নেই দেশে। 

করোনাভাইরাস টেস্ট কিট যেখানে নাই সেখানে আক্রান্তের সঠিক তথ্য পাওয়া দুষ্কর। অজ্ঞ, অদক্ষ এ জনগোষ্ঠী উপায়ন্তে বিধাতার হাতে নিজেদের ভাগ্য সমর্পণ করে আছে। একইভাবে পরিতাপের সাথে বলতে হয়,  প্রকৃতির এ মহা দুর্যোগ থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় না। তাই কালে কালে প্রকৃতিই তার ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নেয়। 

সুতরাং করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হতে হলে এ সুন্দর পৃথিবীটাকে পরিছন্ন রাখতে হবে। আর নিজেরা সচেতন হয়ে পরিস্কার থাকতে হবে শারীরিক ও মানসিকভাবে। তবেই প্রকৃতিকে জয় করা সম্ভব হবে।  ইতালির মত পরাজয়ের ছায়াতে বিষন্ন হবে না আমাদের এ বাংলাদেশ।

লেখক : কলাম লেখক

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর