১১ এপ্রিল, ২০২০ ২১:৩২

ত্রাণ আত্মসাতকারীরা ফরহাদ জিসান ও তার সহযোগীদের দেখে লজ্জিত হোন

হাসিনা আকতার নিগার

ত্রাণ আত্মসাতকারীরা ফরহাদ জিসান ও তার সহযোগীদের দেখে লজ্জিত হোন

হাসিনা আকতার নিগার

গণমাধ্যমে করোনাভাইরাসের সাথে আসছে ত্রাণ চুরির খবর। সংখ্যাগত ভাবে তুলনা করলে ত্রাণ চোরের সংখ্যা বেশি আক্রান্ত অনুপাতে। যা দুঃখজনক। তবে এদের  কোনো দল বা আদর্শ নেই এটা প্রমাণিত।  

বঙ্গবন্ধু তার এক ভাষণে এদেশের অসৎ মানুষদের নিয়ে আক্ষেপ করে বলেছিলেন-‌‌‘... এত চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে কিন্তু এই চোর রেখে গেছে। এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। কিছু দালাল গেছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।’

জাতির পিতার ঠিকই বলেছেন। আর সে কারণে  তার কন্যা শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে পরেও  চাল চুরির ঘটনা ঘটছে কোভিট-১৯ এর এ মহামারীতে। দল আর সরকারকে বিব্রত করছে এসব লোভি ব্যক্তিরা। তারা কাকের মত অন্ধ হলেও মানুষ যে অন্ধ নয় তা বুঝে না।   

মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে কোভিড-১৯ এ কর্মহীন দেশের মানুষ। নিম্ন, মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দিশাহারা তাদের জীবন জীবিকা  নিয়ে। একদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার শঙ্কা। অন্যদিকে জীবন কি করে চলবে সে চিন্তায় কাটে ঘুমহীন রাত। এ অবস্থায় সরকার মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে নানাভাবে। মানুষ আশার আলো পেয়ে ভাবছে অন্তত না খেয়ে মরবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বরাদ্দকৃত চাল চুরি শুরু করেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। লজালজ্জাহীন ভাবে গরীবের অন্নকে গুদামে ঘরে মজুদ করে। যুগ বদল হলেও চেয়ারম্যান, ডিলারদের স্বভাব বদলায়নি। 

আবার সরকারের বরাদ্দ কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না। নানা রাজনৈতিক মতভেদ আর বৈষম্যতা আছে এ প্রক্রিয়াতে। সমাজে মন্দ যেমন আছে তেমন ভালো ও আছে। যার প্রমাণ দেশের তরুণ সমাজ। তারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে কাজ করছে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সাথে এক হয়ে। এ তরুণরা রাজনীতির চেয়ে মানবতার পথে হাঁটতে চায় বেশি। তাই নিজেরা নিজেদের সার্মথ্য দিয়ে কাজ করছে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে।
 
এমনই এক তরুণ  হল চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'যাত্রী ছাউনির' সংগঠক ফরহাদ জিসান। সারা বছর দুই টাকার দোকান সাজিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের হাতে তুলে দেয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আবার সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম ও মানুষের বিপদে ছুটে যায় এ তরুণ ও তার যাত্রী ছাউনি। 

এ ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনীর সচেতনমূলক কার্যক্রমও মানুষকে খাবার দেয়ার কাজে দিন রাত পরিশ্রম করছে সে এবং তার সংগঠনের অন্যরা। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জিসান বাইক দিয়ে খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেয়। তার ফোনে যে কেউ কল করে বলতে পারে সাহায্যের কথা। মধ্যবিত্তদের পরিচয় গোপন করে তাদের জন্য বাজার করা, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছাতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ হয় না জিসানের।

যেখানে অনেকে সরকারি ত্রাণ নিজের নামে বিলি করে নাম কিনছে। সেখানে জিসান তার পরিচয়ে বলে, 'আমি হলাম ডেলিভারিম্যান আর আমার কাজের মূল প্রেরণাকারী হলেন বিজয় বসাক স্যার,  ডিসি উত্তর সিএমপি।'   
 
সদ্য বিবিএ পাস করা বেকার ছেলে ফরহাদ জিসানের জীবনের স্বপ্নটা আত্মকেন্দ্রিক নয়। তাই আজ সে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। নিজের সার্মথ্য নেই অনেককে সাহায্য দেবার। কিন্তু করোনাভাইরাসের এ মহামারীতে প্রায় হাজার খানেক ঘরের মানুষের মুখে অন্ন পৌঁছে দিয়েছে নির্লিপ্তভাবে কাজ করে।
তাই ফরহাদ জিসানের মত তরুণদের দেখলে মনে হয় করোনাভাইরাস পরাজিত হবেই। কারণ মানবতা হারিয়ে যায়নি এখনো। আর এ স্বপ্নবান মানবতার তরুণদের থেকে ত্রাণ আত্মসাতকারীদের উচিত লজ্জিত হয়ে শিক্ষা নেয়া। তবেই মানুষ বাঁচবে, দেশ  বাঁচবে।  
                      
লেখক : কলামিস্ট

বিডি-প্রতিদিনি/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর