১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:৫৩

কৃষকদের জন্য পৃথকভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা প্রশংসনীয়, তবে...

ড. নাজনীন আহমেদ

কৃষকদের জন্য পৃথকভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা প্রশংসনীয়, তবে...

ড. নাজনীন আহমেদ

সরকার কৃষি খাতের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড তৈরির ঘোষণা করেছেন। পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এর মাধ্যমে এই অর্থ কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীরা এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে। কৃষকদের জন্য পৃথকভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা প্রশংসনীয়। তবে এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার।

১. ঋণের সুদের হার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ব্যবসা উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণীত প্রণোদনার মতো ৪ পার্সেন্ট করলে ভালো হতো। স্বাভাবিক অবস্থায় কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয় ৯ শতাংশ সুদে। সে ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সুদ স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কম হলেও যেহেতু শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে ৪% সুদে দেয়া হয়েছে এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের সেই একই হারে দেয়ার চিন্তা করা যেতে পারে।

২. কৃষি খাতের মূল অংশ হচ্ছে শস্য খাত। এছাড়া আছে হাঁস-মুরগি পালন-পশু পালন, মৎস ও বনায়ন। এই মুহূর্তে কৃষির শস্য খাতের বড় প্রয়োজন হচ্ছে সাপ্লাই চেইন রক্ষা করা। এখন বোরো ধান কাটার সময়। এই ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা কি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঠে কাজ করবেন, সেখানে ধান কাটার যন্ত্রপাতি কতটা ব্যবহার করা সম্ভব, সেই ধান কীভাবে চালের কল গুলোতে নেওয়া হবে, যদি দেশীয় চাতাল হয় তাহলে সেই চাতালে এই চাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে কি করে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হবে এই ধরনের বিষয়ে এখন জরুরি সিদ্ধান্ত, দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা দরকার। শস্য কৃষির ক্ষেত্রে কৃষি প্রণোদনার মূলধন হয়তো পরবর্তী শস্য উৎপাদনে বেশি কাজে লাগবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কৃষি প্রণোদনার অর্থ শস্য কৃষিতে খুব জরুরি নয়। তবে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক এর ক্ষেত্রে শস্য কাটার শ্রমিকের খরচের জন্য কিছু অর্থ দরকার হয়। কিন্তু এই প্রণোদনার ফান্ড তৈরি করে তা বিতরণ হতে হতে বোরো ধান কাটার সময় চলে যাবে। কাজেই কেউ যদি জরুরি প্রয়োজনে এই সময়ে কৃষি ব্যাংক থেকে স্বাভাবিক ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়, তাহলে তাকে ওই ঋণের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে এই সিজনে ৫ বা ৪ শতাংশের সুবিধা দেয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।

৩. মৎস্য হাঁস-মুরগি ও পশু পালন এর সকল কৃষির এই সকল খাতের জন্য আসলে এই মুহূর্তে সরবরাহ চেইন ঠিক রাখাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন হাঁস-মুরগির খামারে একদিনের ছোট মুরগির বাচ্চার চাহিদা কম থাকায় অনেক জায়গায় সেগুলো বিক্রি হচ্ছে না। আবার অনেক এলাকায় ডিম উৎপাদিত হলেও সেগুলো বিভিন্ন দিকে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাই কৃষিজাত পণ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে উৎপাদন এলাকা থেকে অন্যান্য স্থানে পরিবহনে সরকারের সহযোগিতা দরকার। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্যের জন্য অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া দরকার এবং পরিবহন সুবিধা দেয়া দরকার। যে সকল পরিবহন উৎপাদন এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মাল বহন করবে, সেগুলো কী করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে চলবে, তা যেমন দেখতে হবে, এই ধরনের পরিবহন কর্মীদের একটি বিশেষ ধরনের পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. যেহেতু কৃষকদের জন্য দেয়া এই চলতি মূলধন ফান্ড আসলে আগামীর কৃষিকে বেশি সহযোগিতা করবে তাই এই মুহূর্তে কৃষিখাতের সমস্যা গুলো দেখায় পদক্ষেপ নেয়া দরকার বেশি । কৃষক যাতে বোরো ধানের দাম ঠিকমতো পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বছর সরকারের উচিত হবে অন্য বছরের তুলনায় বেশি ধান চাল সংগ্রহ করা। সেই চাল মজুদ করার পরিকল্পনাও নিতে হবে। যেহেতু অনেক দরিদ্র মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে তাই এই অতিরিক্ত সংগ্রহ দরকার হবে।

লেখক: বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর