১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০৫:৩৯

বিবেক কাঁদছে!

হাসিনা আকতার নিগার

বিবেক কাঁদছে!

হাসিনা আকতার নিগার

ঘরবন্দী জীবনে মানসিকভাবে ভালো নেই কেউ। কি হবে কি হবে না তা নিয়ে সংশয় মনে। তার মাঝে করোনাভাইরাসের মৃত্যু দেশে বাড়ছে। আক্রান্ত হবার সংখ্যা আরও বেশি হবে যদি টেষ্টের পরিমাণ বাড়ে। এ অবস্থায় কেমন যেন একটা লুকোচুরি ভাবনা মনকে আবেগ তাড়িত করছে সারাক্ষণ। চারপাশে হতাশা, হাহাকার যেন ঘনিয়ে আসছে। ভালো নেই আমার দেশ, ভালো নেই সারা বিশ্ব। বিবেক কাঁদছে। 

যে মায়ের সন্তান রয়েছে প্রবাসে, তার কাছে এ সময়টা কত কষ্টের তা বলা কঠিন। প্রবাসী স্বামী, পিতাকে নিয়ে উদ্বেগ আপনজনদের সীমাহীন। বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার যন্ত্রণা আজ তাদের কাছে মহাপ্রলয়ের সম। 

থমকে যাওয়া জীবনে করোনাভাইরাস চিনিয়ে দিচ্ছে মানুষকে মানুষের প্রকৃত রূপ। মরণঘাতী এ ভাইরাসের ভয়ে মাকে জংগলে ফেলে দেয় সন্তান। এ নির্মমতা অসহনীয়। আবার ভাইরাসে নিজে সংক্রমিত হবে জেনেও; মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে দাফন করেছে পিতা। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় নিজের আত্মজকে শেষ বিদায় দেয়া বাবার জন্য কেয়ামতসম। সবগুলো ঘটনাই নিজের অজান্তে অশ্রুপাত ঘটায় কেবল।    

বেঁচে থাকার লড়াইটা কোন কালেই সহজ নয়। তাই  সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে মা বাবা ঘরে না থেকে ছুটছে ত্রানের আশায়। কোভিট-১৯ এর মৃত্যু থেকে অনেক কষ্টের অনাহারি সন্তানের মুখ দেখা। আসলে আবেগের কাছে পরাজিত হয় মানুষের মৃত্যু ভয়।

আর এ মানুষদের অন্ন চুরি করছে কিছু অমানুষ। ত্রান চুরি করা অমানবিক মানুষদের বিবেক মরে গেছে। এরা নিজের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না। তাই তেলের বোতল দেখে লোভ সংবরন করতে পারে না। বিছানার ভেতর থেকে তেল উদ্ধার দেখে লজ্জিতও হয় না। জনপ্রতিনিধি নামের উপর কলঙ্ক লেপন করে এসব লোভীরা।

মহামারীর এ সংকটকালে নিজে বাঁচার সাথে অন্যকে বাঁচতে দিতে হবে। সরকারের কাছে সকল জনগন সমান। তাই রাজনৈতিক ভেদাভেদকে মুখ্য করে নোংরামির রাজনীতি করা এখন মূর্খতা। অথচ এমন নোংরামি হচ্ছে কোভিট-১৯ মোকাবিলার ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা চিকিৎসক মঈন উদ্দিনকে নিয়ে। মানবতার ডাক্তার হিসেবে সিলেটের এ চিকিৎসকে বাঁচাতে না পারার অনুতাপ নাই। বরং চলছে তার রাজনৈতিক আর্দশের সার্জারি। তিনি একটা এয়ার এম্বুল্যান্স পায়নি যোগ্যতার প্রশ্নে। তারপরেও ভাগ্যে জুটেনি আইসিইউ এম্বুল্যান্স। এটাই হয়তো তার নিয়তির লিখন। কিন্তু তার সহকর্মী, চিকিৎসক সংগঠন তারা সকলে মিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে একটা এম্বুল্যান্স হয়তো যোগাড় হত। তারা তা করেনি। তাই জীবন আগে না যোগ্যতা আগে- এ প্রশ্নটা কিন্তু রয়ে গেল জনগনের কাছে। 

যে চিকিৎসক মানব সেবাকে তার ব্রত জেনে কাজ করেছে তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে এটা স্বীকার করা উচিত সকলের। আর এ মুহুর্তে চিকিৎসকরা না বাঁচলে জনগণকে বাঁচানোর সমস্ত চেষ্টা বিফলে যাবে। তাই কথায় কথায় রাজনীতির তকমা লাগিয়ে ভুলকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা ভুল। সমাজকে যারা এভাবে নষ্ট করে তাদের থেকে মুক্তি চায় জনগণ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেখানে প্রাণপন লড়াই করছে মানুষকে বাঁচতে। সেখানে ত্রান চুরি, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, প্রশাসনিক দুর্নীতি মানুষ সহ্য করবে না এটাই সত্য।

কোভিট-১৯ কোন রাজনৈতিক লড়াই নয়। এখানে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধাদের হাতে মানুষের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব। একটা যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে সম্মুখভাগের যোদ্ধাদের রসদ আর সার্পোট অত্যাবশ্যক। ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দারের মতই আমাদের চিকিৎসকদের অবস্থা। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অবস্থাই তথৈবচ। আর দেশের অন্য জায়গার অবস্থা বলা বাহুল্য। 

আসলে বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তবু অন্য দেশে থেকে বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। কারণ এখানে খাবার চুরি হয় অতীতের মত, মানুষের মৃত্যু নিয়ে চলে রাজনৈতিক নাটকীয়তা। নৈতিকতা ন্যায় আর মানবিকতা চেয়ে দাম্ভিকতার ব্যবসা বিদ্যমান এখনো।

লাশের সারি বড় হচ্ছে কিন্তু এক দল মানুষের ঘরে থাকতে অনীহা। আরেক দল পেটের তাগিদে বাইরে। আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রেশনিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। তা না হলে বিবেকের কান্নাই লেখা হবে ইতিহাসের পাতা। যা শোধরানো সুযোগ আসবে না আর।    

লেখক: কলামিস্ট


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর