২০ এপ্রিল, ২০২০ ১৫:২৫

করোনাভাইরাস সংকট : এই সময় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজনীয়তা

মো. আজিবুর রহমান

করোনাভাইরাস সংকট : এই সময় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজনীয়তা

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫৭ লাখ মানুষের জন্য ওষুধ উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের দেশের ফার্মাসিস্ট। এ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ যখন হোম কোয়ারেন্টাইনে তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ফার্মাসিস্ট কাজ করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে।

বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ওষুধ তৈরি হয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয় প্রতি বছর। যা গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও দিক-নির্দেশনায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস বার্ষিক প্রায় (সরকারি মূল্য) ৬০০ কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করে কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট কাজ করে থাকেন ওষুধ উৎপাদনে, ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে, কমিউনিটি ফার্মেসিতে (মডেল ফার্মেসি), হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও ওষুধ নিয়ে গবেষণায়। 

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৬২০০ নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট রয়েছে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, হবে ওষুধের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার।  
 
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের ফার্মাসিস্টরা হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলে ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টও রোগীদের নিরলস সেবা দিয়ে যেত। 

বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি গবেষণাগারগুলোতে ওষুধ নিয়ে গবেষণায় সরকারি দিকনির্দেশনা ও বিনিয়গ থাকলে বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারে ভ‚মিকা রাখতে পারতেন আমাদের ফার্মাসিস্টরা।

এই তো সময় সরকারের ফার্মাসিস্ট ও ফার্মাসিউটিক্যাল নিয়ে চিন্তা করার। স্বাস্থ্য খাতকে পরিপূর্ণ করার। হসপিটালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট না থাকায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত অপূর্ণ। ডাক্তাররাও আজ ক্লান্ত। কারণ ফার্মাসিস্টরা পারেন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করে ডক্টরদের সহযোগিতা করার জন্য। 

উন্নত বিশ্বের মতো ডাক্তার সঠিক রোগ নির্ণয় করবে আর ফার্মাসিস্টরা সঠিক ওষুধ নিরাপদভাবে প্রয়োগ করতে সহযোগিতা করবে। তবেই বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, বন্ধ হবে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহার। 

রোগী জানবে কোন ওষুধ কখন খেতে হয়, ওষুধ কীভাবে কাজ করে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার। তখন ডাক্তাররা রোগীর রোগ নির্ণয়ে অধিক মনোযোগী হতে পাড়বে। নিশ্চিত ও সুরক্ষিত হবে স্বাস্থ্যসেবার মান।  বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরে আসবে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার উপচেপড়া ভিড় কমে যাবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানিতে যেমন এগিয়ে তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে বিদেশি রোগীদের বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উপেক্ষা করে ফার্মাসিস্টরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের এই ক্রান্তিকালে। গত ১৬ এপ্রিল এইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে ফার্মাসিস্টদের ও ফার্মাসিউটিক্যালের অবদানের কথা স্বীকার করে ফার্মাসিস্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ফার্মাসিস্টদের প্রতি তাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে আশা করি। 

সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্র থেকে দরিদ্র ও সব স্তরের মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ওষুধ উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। 

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ডাক্তারের বাবস্থাপনাপত্রবিহীন ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বিক্রি বন্ধের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কমিউনিটিভিত্তিক ফার্মেসি (মডেল ফার্মেসি) যেখানে একজন রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়ার পরে অনেক মডেল ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট রাখা হয় না। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  

আজ দেশের এই মহামারীর মধ্যেও অনেক ফার্মাসিস্ট হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে ভলান্টিয়ার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের কাছে আগ্রহ প্রদান করেছেন। ফার্মাসিস্টদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজে লাগানো যেতে পারে। 

বিসিএসের মাধ্যমে ফার্মাসিস্টদের সব হাসপাতালে নিয়োগ দিলে এবং সব প্রাইভেট হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করে দেওয়া যেতে পারে।   
  
উন্নত বিশ্বে ফার্মাসিস্ট ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা অসম্পূর্ণ বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে! বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কাজে লাগায়। সরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয়। বিসিএসের মাধ্যমে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দিন। গুরুত্ব দেন গবেষণায় তবেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা আরও সমৃদ্ধ হবে।   

লেখক: এম ফার্ম, এমবিএ, পিজিডি এইএম

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর