২২ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:০১

লকডাউন নেই, সুইডেনের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে?

নাজমুন নাহার

লকডাউন নেই, সুইডেনের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে?

নাজমুন নাহার

আঁধার শেষ হয়ে আলো ফুটবে। মানুষের জীবনে এ আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মানবসভ্যতা। একদিন পৃথিবী করোনামুক্ত হবে সে আশায়- মানুষ প্রতিটা ক্ষণে এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু তারপরও মৃত্যুর মিছিলে ক্রন্দনরত এই পৃথিবী।

যেসব দেশগুলো লকডাউনে আছে তারা কতদিন লকডাউন হয়ে থাকবে সেটাও যেমন অনিশ্চিত তেমনি সুইডেনের মত দেশটি যে লকডাউন হয়নি সেটাও এখন সমালোচনার মুখে। তবুও বৈজ্ঞানিকরা তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ পদ্ধতির মাধ্যমে কিছুটা অনুমান করতে পারছে পরিস্থিতির গতিবিধি।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এক অনিশ্চিত যাত্রা পথে এখন সুইডেন। সুইডেন তার নিকটতম প্রতিবেশীদের তুলনায় এক হাজার করোনভাইরাস মৃত্যুর মারাত্মক মাইলফলক অতিক্রম করেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সরকারের হালকা- রিলাক্স পদ্ধতি অব্যাহত রাখার ফলে এটি প্রাদুর্ভাবের শিখরে পৌঁছে যাবে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সুইডেনের মৃত্যু অনেক বেশি। সুইডেন মৃত্যুর মোটামুটি নতুন উচ্চতায়। সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সুইডেনে কোভিড- -১৯ এর কারণে এখন ১,০৩৩ মানুষ মারা গেছে।

গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যান লটভাল বলেছেন, যে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তারা অস্পষ্ট বার্তা পেয়েছে বলে সুইডিশ লোকেরা পরিস্থিতিটির গুরুত্বটা বুঝতে পারেনি।

যদিও কর্তৃপক্ষ সিনিয়র হাইস্কুল বন্ধ করেছে এবং ৫০ জনেরও বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে, তারা আদেশের পরিবর্তে - জনগণকে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়াতে, বাড়ি থেকে কাজ করা এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সী বা অসুস্থ বোধ করছে তবে ঘরে বসে থাকতে বলেছে।

তবে পরিসংখ্যান দেখায় যে সুইডিশ কর্মীরা এখন বাড়ি থেকে কাজ করছেন, স্টকহোমে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবহার ৫০% হ্রাস পেয়েছে এবং রাজধানীর রাস্তাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭০% কম ব্যস্ত - তবে সুইডিশরা এখনও কেনাকাটা করতে, রেস্তোঁরায় যেতে, চুল কাটতে যান এবং পরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ থাকলেও ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্লাসে পাঠান।

প্রাথমিক ও জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ করতে সরকারের অস্বীকৃতি - এবং কর্তৃপক্ষের জোর যে কেবলমাত্র নিজেরাই অসুস্থ শিশুরা ঘরে থাকতে পারে - কিছু পরিবার এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ তৈরি করেছে সরকারের এই বিষয়টি।

পোলিংয়ের পরামর্শ দেয় যে অনেক সুইডেন সরকারের কৌশলকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যা বাধ্যতামূলক নিয়মগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করার পরিবর্তে নাগরিকদের শারীরিক দূরত্ব নির্দেশিকা অনুসরণ করার জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেছে।

শনিবার দাগেন্স নাইহারের দ্বারা প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে ল্যাভভেন বলেছিলেন যে দেশটি হাজার হাজার করোনভাইরাস মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারে এবং কয়েক সপ্তাহের পরিবর্তে কয়েক মাস ধরে এই সংকট টানতে পারে।

"আমরা বক্ররেখাকে সমতল করার চেষ্টা করেছি এবং খুব বেশি নাটকীয় প্রক্রিয়া না করার জন্য একটি কৌশল বেছে নিয়েছি, কারণ তখন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সম্ভবত মোকাবেলা করবে না,"

সংশ্লিষ্ট পরিবার এবং স্কুল কর্মীরা সরকারের নীতিটিকে "অগ্রহণযোগ্য" হিসাবে বর্ণনা করে খোলা চিঠি লিখেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে স্কুল খোলা "শিশুদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন গবেষক প্রকাশ্যে কৌশলটির সমালোচনা করেছেন এবং রাজনীতিবিদদের সরকারের এই নীতি পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গবেষকরা ফিনল্যান্ডকে হাইলাইট করেছেন, যা প্রতি ব্যক্তি ভিত্তিতে সুইডেনের চেয়ে দশগুণ কম মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে সুইডেনের মৃত্যু ডেনমার্ক এবং নরওয়ের চেয়েও অনেক বেশি, যা সেই সব দেশগুলো কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে বলা হয়েছে।

গবেষকরা এখন দ্রুত পরিবর্তন চান। তারা পরামর্শ দেয় যে ফিনল্যান্ডের মতো স্কুল এবং রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ করা উচিত। এছাড়াও, বয়স্কদের সাথে কাজ করা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের অবশ্যই সঠিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি গণ পরীক্ষা করতে হবে।

সুইডেনে এখন চারিদিকে ঝকঝকে রোদ। তাপমাত্রা আগের তুলনায় একটু বেড়েছে। অনেকদিন পর গতকাল আমি ইকা সুপার মার্কেটে গেলাম। এস্কিলস তুনা শহরে আমার বাসার সামনে ঠিক একটা গলি পরেই ইংলিশ স্কুল, পেছন দিকে দুটো গলি পাড় হলেই সুইডিশ স্কুল। দু'পাশ থেকে আমি বাচ্চাদের কিচিরমিচির শুনতে পাই প্রতিদিন। মাঠে যখন তারা খেলে সেই শব্দও শোনা যায়। তাতে আমার ভালোই লাগে, স্কুলের মাঠে বাচ্চাদের লাফালাফি আর খেলাধুলার শব্দ শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় কিছুই হয়নি পৃথিবীর, সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়। এটা যেমন একদিকে আমার মানসিক প্রবৃত্তির উত্তরণ ঘটায় অন্যদিকে যখন নিত্যদিনের খবরে চোখ রাখি তখন কিছুটা হতাশার ছায়ায় ঢেকে যায় পৃথিবীর সব মানচিত্র।

দ্বিধাদ্বন্দের এই আটকে থাকা সময়ে তারপরও আমরা প্রস্তুত থাকি নিজেকে রক্ষা করার জন্য।

লেখক: বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর