২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০৮:২৯

চোখের সামন চলে গেলো পার্থ

অধ্যক্ষ শাজাহান আলম সাজু

চোখের সামন চলে গেলো পার্থ

পার্থ প্রতিম আচার্য

দিনটি ছিল ১৯৯৮ সালের, ২৩ এপ্রিল। আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায়। সময় সকাল  এগারটা। স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিন। আমরা ছাত্রলীগের টেবিলে বসা। আমি তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক। এনামুল হক শামীম সভাপতি, ইসহাক আলী খান পান্না সাধারণ সম্পাদক। 

একটু পরই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস বিরোধি সমাবেশ শুরু হবে। এসময় জগন্নাথ হল থেকে মিহির, বিপ্লব (বর্তমানে রংপুরের এসপি) এবং পার্থের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল আসে। পার্থ এসে আমার কানে কানে বলে 'সে ছানা খাবে'। আমি মধুদা'র ছেলে অরুণ দা'কে বললাম পার্থ কি বলে শুনুন। 

পার্থ মধুর ক্যান্টিনের ভিতরে অরুণদার পাশে বসে ছানা খেয়ে আমার পেছনে এসে বসতে না বসতেই হঠাৎ ছাত্রদলের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সু্র্যসেন হল ও আন্তর্জাতিক হলের কাছে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয় পার্থ। 

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলসহ অন্যন্যরা পার্থকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। গেলে সেখানেই সে মৃত্যুবরণ করে। 

পার্থ গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে মুহূর্তের মধ্যে ক্যাম্পাসের চিত্র বদলে যায়। ছাত্রদলের সাথে ব্যাপক বন্দুক যুদ্ধ চলতে থাকে। ছাত্রদলের সভাপতি শহিদুজ্জামান এ্যানি মধুর ক্যান্টিনে আটকা পড়েন। আমরা তখন চিন্তা করলাম এ্যানি ছাত্রদলের সভাপতি তার গায়ে হাত দিলে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। 

এরই মাঝে  ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা এ্যানিকে ঘিরে ফেলে। শামীম ভাই আমাকে বললেন আপনি এদিকটা দেখেন। আমার তখন এ্যানিকে ঢাকসু ভবনে  সরিয়ে নিতে গিয়ে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। আমি তাকে ঢাকসু ভবনে, ঢাকসু সংগ্রহশালার কেয়ারটেকার গোপালদা'কে তাড়াতাড়ি একটা স্কুটার আনতে বলে দরজায় দাড়িয়ে থাকি। গোপালদা স্কুটার নিয়ে আসতে না আসতেই শাকিল আমাকে ফোন করে জানায় পার্থ মারা গেছে। 

একথা শুনেই আমার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে যায়। আমি শুধু এ্যানিকে বললাম পার্থ মারা গেছে আপনি একমুহূর্ত দেরি না করে স্কুটারে উঠেন। তখন ছাত্রলীগের আমরা চার-পাঁচজন মাত্র মোবাইল ব্যবহার করতাম। তখনো পার্থের মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়নি। অ্যানিকে স্কুটারে উঠিয়ে দেওয়ার পরপরই  ক্যাম্পাসে পার্থের মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায়। ডাকসুতে আগুন দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদল বিতারিত হয়। 
 
উল্লেখ্য, পার্থ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। সে মুজিব আদর্শে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিল। আমি যতটুকু জানি ঐদিন তার মানিকগঞ্জে তার বাড়িতে যাবার কথা ছিল। ওর স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিলেন, তাকে নিয়ে চেকআপ করতে ডাক্তারের কাছে যাবার কথা ছিল। তার বন্ধুরা তাকে জোর করে মিছিলে নিয়ে এসেছিল। পার্থের মৃত্যুর পর তার মেয়েটির জন্ম হয়। সে সম্ভবত এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। 

আজ পার্থের মৃত্যু বার্ষিকী দেখতে দেখতে ২২টি বছর কেটে গেল। স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পার্থ প্রতিম আচার্যের আত্মত্যাগের কথা আমরা কয়জন মনে রেখেছি? যে দলের জন্য মেধাবী পার্থ নিজের জীবন বিলিয়ে দিল সেই দল তাকে কতটুকু মনে রেখেছে? পার্থের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

 

বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর