২৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:৪৭

সেই লুটেরাদের ধরে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনুন

ড. কাজী এরতেজা হাসান

সেই লুটেরাদের ধরে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনুন

পৃথিবীতে মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। পুরো পৃথিবীর ২০৪ টি দেশে ছড়িয়ে পরেছে এই মরণঘাতী ভাইরাস। পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোও বিপর্যয়ে এই করোনাভাইরাস মোকাবিলায়। এ অবস্থার বাইরে নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে। আক্রান্তের সংখ্যাও ৭১০৩ জন। পৃথিবীময় এতো প্রাণহানির মধ্যেই অর্থনৈতিক মহাবিপর্যয় যে নিশ্চিত সেটিতে বিশ্ব একমত। সবাই সে বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা সবার জন্য ঘোষণা করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় খাদ্যউৎপাদনের তাগিদ দিচ্ছেন। দেশপ্রেমিক শিল্পপতি ব্যবসায়ী সহ মানুষ লড়ছে। এই মহা দুঃসময়ে সবাইকে পাওয়া গেলেও যারা ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা। শেয়ারবাজার লুটেরা নেই। গার্মেন্টস মালিকরা দেবে কি নিতেই জানে! শ্রমিকের বেতনটাও দেয়নি কারখানা খুলে আগাম সংক্রমণ বাড়িয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। এক দশকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অর্থপাচারকারী ও শেয়ার ব্যাংক লুটেরা দেশদ্রোহী। আজ ওরা কই? সেই লুটেরা অর্থপাচারকারীদের ধরে টাকা ফিরিয়ে আনা হোক।দেশের দুঃসময়ে দেশের অর্থ প্রয়োজন এখন।

সরকারের পক্ষ থেকে করোনো ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণের প্রতি যতই আহ্বান জানানো হোক না কেন, জনগণ পুরোপুরি তা মানছেন না। ফলে সংক্রমণের হার দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির ওপরও চাপ বাড়ছে ক্রমাগতহারে। কিন্তু এ অবস্থা শেষে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটিকেও অপ্রতুল মনে হচ্ছে।

এখন  অবৈধভাবে পাচার হওয়া এই বিশাল অংকের অর্থ ফিরিয়ে এনে ভর্তুকি আকারে শিল্পখাতে দিলে রুগ্ন হয়ে পরা শিল্পখাত জীবনীশক্তি ফিরে পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

গত বছরের শুরুতেই বিবিসি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাণিজ্যে কারসাজির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।  বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০১৯ সালের মধ্যে এ সংখ্যাটা ১ লাখ কোটি ছাড়িয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কতিপয় ব্যবসায়ী যারা নিজেদের বিজনেস আইকন বা ম্যাগনেট হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকেন তারাই, পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় এ কারসাজি করে টাকা পাচার করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য-আমদানি রপ্তানিতে কারসাজির মাধ্যমে কিভাবে অর্থ পাচার হয়ে গেছে, তার একটি চিত্র এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ থেকে টাকা বেরিয়ে গেছে দুইভাবে - একটি উপায় হচ্ছে, পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার, আরেকটি হচ্ছে, পণ্য রপ্তানি করার সময় কাগজপত্রে দাম কম দেখানো।

রপ্তানির সময় কম দাম দেখানোর ফলে বিদেশী ক্রেতারা যে অর্থ পরিশোধ করছে, তার একটি অংশ বিদেশেই থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আসছে শুধুমাত্র সেই পরিমাণ অর্থ, যে পরিমাণ অর্থের কথা দেখানো হচ্ছে অর্থাৎ কাগজপত্রে যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে সেটা।

ফলে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িত বড় বড় ব্যবসায়ীদের ফাইল খুললেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত চিত্র। এই পাচার হওয়া ১ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে করোনা পরবর্তী সময়ে যে দুর্যোগের আভাস পাওয়া গেছে, সেটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।

আমাদের সমাজে কিছু পুঁজিপতি এবং ধনী রয়েছে যারা শুধু খাই খাই করছে। তাদের কোনো কিছুতেই অভাব যেন মিটে না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, ‌‌''এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি। রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।'' আমাদের আশেপাশে এমন অনেক ধনি রয়েছে যারা নিজেদের ধন কোনোভাবেই গরিবের প্রয়োজনে বিলিয়ে দেবে না; এমন মানসিকতা যাদের তাদের প্রতি ধিক্কার জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।

আমাদের সমাজে কিছু ব্যবসায়ী আছে যারা সরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে বিত্ত বৈভব গড়ে তুলেছেন, এমনকি বিদেশে বাড়িও করেছেন। জাতির এই দুঃসময়েও তাদের গরিবের উপকার করার কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। তাই এসব ধনীদের সম্পদের হিসাব তলব করে খেলাপি ঋণ উদ্ধার করে দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

তাই সরকারের পক্ষ থেকে সকল পুঁজিপতি এবং যেসব ধনিরা খাই খাই করছে তাদের অবৈধ বিত্ত, খেলাপি ঋণ আর পাচারকৃত টাকার জন্য চাপ দেয়া এই মুহূর্তের জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা ও ডেইলি পিপলস টাইম। পরিচালক, এফবিসিসিআই।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর