৩০ এপ্রিল, ২০২০ ১০:৩৬

সাংবাদিকের অকস্মাৎ মৃত্যু এবং শবযাত্রায় আমরা

প্রণব মজুমদার

সাংবাদিকের অকস্মাৎ মৃত্যু এবং শবযাত্রায় আমরা

প্রণব মজুমদার

কাল সারারাত জেগে ছিলাম ! দু'টি মৃত্যু বেদনা এর প্রধান কারণ। চিরতরে চলে যাবো আমরা সবাই ! তা চিরন্তন! জন্মের ঋণ শোধ হয়ে যায় জীবন নিঃশেষে। কিন্তু সময়তো হয়নি তাঁদের চলে যাওয়ার?

দুইটি মৃত্যু সংবাদ পরপর পেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। মৃত্যু পদযাত্রী একজন প্রবীণ, আরেকজন অপেক্ষাকৃত নবীন। অগ্রজ ও অনুজ দুইজন দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। শ্রদ্ধাবনত খোন্দকার মোহিতুল ইসলাম (রঞ্জু) এবং স্নেহাশীষ হুমায়ুন কবীর খোকন অনেকের মতো আমারও প্রিয় মানুষ ছিলেন। রঞ্জু ভাই বেশ কিছুদিন হৃদরোগে অসুস্থ ছিলেন, ওনার একাধিকবার হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে শল্য চিকিৎসা হয়েছে। শেষ ক'টা দিন শয্যায় তিনি অবচেতন ছিলেন। কিন্তু খোকনের একেবারে তিরোধান যেন মুহূর্তেই সমাপন হলো! খোকনের অসুস্থতার প্রথম সংবাদ জানতে পারি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে! মাত্র ৭ ঘণ্টার জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে আমরা হেরে গেলাম মৃত্যুর কাছে। খোকনের অকাল প্রয়াণ।

বারবার মনে পড়ছিলো অসময়ে চলে যাওয়া দুই সহকর্মীর জীবনের মমতায় মাখা ঘটনাগুলোর নেপথ্য কথা। ভালো মানুষ হিসেবে সমাজকে আরও কিছুদিন মেধা বিতরণ ও শ্রমদানে তাদের বেশ প্রয়োজন ছিলো।
ক'দিন আগে করোনায় অপমৃত্যুর শংকা নিয়ে কন্যা প্রমিতি বলেছিলো, 'ভালো মানুষ পৃথিবী থেকে আগে চলে যান। আমরা পাপীষ্ঠ ! আমাদের মরণযাত্রা বিলম্ব হবে বাবা। তাই দুঃচিন্তা করো না ।' ওনাদের দ্রুত প্রস্থানের ক্ষেত্রে মেয়ের কথাটিই মনে পড়ে গেলো।
দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, অমায়িক এবং স্বভাবে অকৃত্রিম ও সরল ব্যক্তি রঞ্জু ভাইয়ের বেলায় এসব বিশেষণ মানায়। তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই এসব গুণের টের পেয়েছিলাম।

১৯৯৫ সাল নভেম্বর মাসের এক সন্ধ্যা! তখন আমি দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। অর্থনীতি বিটে কাজ করি। রাজধানীর মতিঝিল হোটেল পূর্বাণীতে কর্পোরেট সুশাসনের ওপর ঢাকা চেম্বারের একটি কর্মশালার সংবাদ সংগ্রহ করে তেজগাঁও অফিসে যাচ্ছিলাম। মতিঝিল থেকে হেঁটে এলাম পুরানা পল্টন মোড়! তখন ছ'টা দশ বাজে। হাত ভারি কর্মশালার কাগজপত্রে। সাত রাস্তার মোড়, তিব্বত, নাবিস্কোর বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন পোশাকে সাধারণ পঞ্চাশোর্ধ কালো এক ভদ্রলোক। তিব্বত স্টপেজে নামার উদ্দেশ্যে সেই রুটের বাস ধরার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে কিছুতেই বাসে উঠতে পারছিলাম না। অফিসে চীফ রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম কাদির ভাইকে আটটার মধ্যে নিউজ দিতে হবে! কাগজপত্র সব ইংরেজীতে! তা পড়ে বাংলায় লিড হেডিং হওয়ার মতো ইন্ট্রো করা চাই। তাই কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া! একটা রিকশা ডাকলাম। বিশ টাকা চাইলো। রিকশাওয়ালাকে বললাম ষোল টাকা দিবো। বললো, উঠেন! এ সময় লোকটা আমার সামনে এগিয়ে এলেন। হেসে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আপত্তি না থাকলে আমিও আপনার রিকশায় ওই দিকেই যাবো।
ভাড়া ফিফটি ফিফটি! ভাবলাম অর্ধেক ভাড়া সাশ্রয় হবে। উত্তম প্রস্তাব! উনি ওঠার পর আমিও রিকশায় চাপলাম। আমার পরিচয় জানলেন তিনি! যেতে যেতে বললেন, তিনি দৈনিক জনতা পত্রিকায় কাজ করেন। জাতীয় পার্টি ওনার বিট। থাকেন স্বামীবাগ মিতালি স্কুলের পিছনে। অর্থনীতি বিট কাজ করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা জেনে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন তিনি। আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি জেনেও খুশী হলেন। রিকশা থেকে নামলাম তিব্বত বাস স্টপেজ থেকে খানিকটা সামনে। রিকশাওয়ালাকে বললাম এই স্যারকে তেজগাঁও ওনার অফিসের সামনেই নামিয়ে দিবে। এই নাও তোমাকে বিশ টাকাই দিলাম। রঞ্জু ভাই সহাস্যে বললেন এটা ঠিক হলো না প্রণব? আমার কাছে টাকা তো ছিলোই! বললেন দেখা হবে প্রণব, ভালো থাকবেন। তারপর একাধিকবার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অফিসে যেতে বাস ও রিকশার সহযাত্রী হয়েছি। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বিভিন্ন অ্যাসাইমেন্টে রঞ্জু ভাইয়ের আন্তরিক সহযোগিতা ও সান্নিধ্য পেয়েছি!

দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় কাজ করতে এসে ওনার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। উনি এখানে পররাষ্ট্র, আমি অর্থনীতি বিষয়ে কাজ করি। সে সম্পর্ক শেষ অবধি আমাদের পরিবারকেও স্পর্শ করে। আন্তরিকতা, সহমর্মিতা এবং সহযোগিতা দৃঢ় হয় আমাদের। গিনি ভাবী মানে রঞ্জু ভাইয়ের স্ত্রী শাহিদা ইসলাম, বড় ছেলে রিঙ্কু, একমাত্র মেয়ে কান্তা, ছোট ছেলে তামিম এবং শ্যালিকা রিনি আপাসহ নিকট আত্মীয়দের সঙ্গেও কত সময় কেটেছে মধুর আন্তরিকতায় সে গল্পের পরিধি অনেক বড়। দৈনিক অর্থনীতি পত্রিকায় উনি ছিলেন প্রধান প্রতিবেদক! আমি একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক! আমার ওপর বেশ ভরসা রাখতেন। বিশ্বাস করতেন প্রচণ্ড। ছুটি দিতে চাইতেন না! বলতেন লিড নিউজ এবং বিএসএস ও ইউএনবি সার্ভিসের স্লেগ থেকে অনুবাদের রিপোর্ট কাকে দিয়ে করাবো প্রণব? বলতাম, আমিই কি একমাত্র সহকর্মী এখানে? বাকিরা কী বেতন নেন না? রঞ্জু ভাইয়ের উত্তর - তোমাকে ছাড়া আর কারো ওপর নির্ভর করতে পারি না যে! বাংলার বাণীতে থাকাকালে বিয়ে করছি! নতুন সংসার জীবন। অর্থনীতিতে বেতন কম, তাই দৈনিক আজকের কাগজ এ চলে গেলে রঞ্জু ভাই বেশ হতাশায় পড়ে যান। সম্পাদকের দুর্ব্যবহারে তিনি অর্থনীতি ছাড়তে বাধ্য হলেন। যোগ দিলেন বাংলাদেশ অবজারভার এ। দেখা হয় ক্লাবে, সচিবালয়ে এবং পারিবারিকভাবে। রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা জায়গায় বেশ মিল ছিলো! তা হলো আমাদের সরলতা এবং ন্যায্য বা অন্যায্য যে কোন সিদ্ধান্ত নীরবে মেনে নেয়া। অনিশ্চিত সাংবাদিকতা পেশায় প্রশাসনিক, সম্পাদক এবং মালিকপক্ষের অন্যায় ও বঞ্চনায় আমরা দুইজনই ভুক্তভোগী। আমার মতো রঞ্জু ভাইও অনেক সংবাদপত্র হাউজ থেকে বেতন ও পাওনা না পেয়ে বিদায় নিয়েছেন। সাংবাদিক কোটায় রাজউক হতে প্রাপ্ত সরকারি প্লটে নিকুঞ্জে তিনি এক তলা বাড়ি করেছেন! সেখানেও পরিবারসহ বেড়াতে গিয়েছি। সে বাড়িতে যাওয়ায় খুশি হয়েছিলেন তিনি। বললেন, প্রণব আমার কিছু ভালো লাগে না! ভাবছি রাজবাড়ী গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো। শেষ জীবনটা ওখানেই কাটিয়ে দিবো। পশ্চিমবঙ্গের অপর্ণা- ভিক্টর অভিনীত বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র একান্ত আপন দেখে তিনি ও ভাবী মুগ্ধ হয়েছিলেন! তাড়াহুড়ো করে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটীর শিল্পাঞ্চলের জমি বেশ কম দামে বিক্রয় করে ফেললেন! যার মূল্য এখন কয়েক কোটি টাকা! একান্ত আপন নামের বাড়ি নির্মাণের অর্থ আসলো সেই বিক্রিত জমির অর্থ এবং ব্যাংক ঋণ থেকে। পরিবারের কলেবর বৃদ্ধি, একান্ত আপন এবং হঠাৎ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে ওনার ছাঁটাই ইত্যাদি কারণে তিনি সংকটে পড়ে যান। তাই তিনি মনমরা থাকতেন। এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন থেকে কমলাপুর আসতেন ট্রেনে। হেঁটে আসতেন শান্তিনগর পাঞ্জেরী পাবলিকেশনে। অনুবাদ, সম্পাদনা এবং সংশোধনের কাজ করতেন এখানে। ছোট বড় কাজের ব্যাপারে ওনাকে কোনদিন লজ্জাশীল দেখিনি। বন্ধু ও পরিচিতদের যে কোন ইতিবাচক সংবাদে তিনি খুশি হতেন। কতো লোককে তিনি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তা আমিও জানি। উপকার করা ওনার মজ্জাগত স্বভাব ছিলো। নিজের পাক্ষিক অর্থকাগজ নিয়মিত বের হয় শুনে বেশ প্রশান্তি অনুভব করতেন। অর্থকাগজ এর উপার্জনের টাকায় আমি ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছি তাতে তিনি আনন্দিত ছিলেন! রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে আমি টেলিফোনে যোগাযোগ রাখতাম। দীর্ঘ সময় ফোনালাপে ওনার সঙ্গে নানা খবর বিনিময় হতো। অসুস্থ হওয়ার আগে উত্তরায় একটি নিউজ পোর্টালে কাজ করতেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এর বনভোজনসহ প্রায় অনুষ্ঠানেই ওনি ও ভাবির সঙ্গে দেখা হতো। রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় গত নভেম্বর মাসে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি(ডিআরইউ) এর বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি উত্তরা বাসা থেকে আসবেন বলে ফোনে জানালেন। ডিআরইউ এজিএমে ব্যাগ উপহার দিচ্ছে না এই তথ্য জেনে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন। রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে সেটাই আমার শেষ আলাপ!
ভাবির ফেসবুকে টাইমলাইনে রঞ্জু ভাইয়ের অসুস্থতার হাল নাগাদ খবর জানতে পারি। ম্যাসেঞ্জারেও যোগাযোগ রাখি। ১৯ এপ্রিল গিনি ভাবি জানালেন তোমার রঞ্জু ভাই ইউনাইটেড হাসপাতালে আইসিইউতে আজ ক'দিন। চিকিৎসকরা তাদের কাউকে দেখতে দিচ্ছেন না। খবরটা শুনে বলতে পারলাম না অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই হাসপাতালের আমার স্ত্রী হেনার ভুল চিকিৎসার বৃত্তান্ত। মৃত রোগীকে আইসিইউতে রেখে বেসরকারি চিকিৎসালয়ের অমানবিক বাণিজ্য কৌশলের নানা ঘটনার বিবরণ। আইসিইউতে দীর্ঘসময় থাকার সংবাদ শুনে মনে মনে ভাবলাম আমাদের সবার প্রিয় দেশের খ্যতিমান সাংবাদিক ও সাহিত্যিক খোন্দকার মোহিতুল ইসলাম রঞ্জু ভাই আর জীবনে ফিরে আসছেন না!

ভাবি ফোনে বললেন ১৬ এপ্রিল, ২০২০ থেকে ৩ দিনে মূসকসহ ইউনাইটেড হাসপাতালের বিল এসেছে চার লাখ, এক হাজার ৮২৯ টাকা ৬১ পয়সা। করোনার এই দুঃসময়ে রঞ্জু ভাইকে নিয়ে ভাবি বেশ অন্ধকার দেখছেন। রোগী দেখবেন, না অর্থ জোগাড় করবেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় শাহিদা ইসলাম সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছেন আর রঞ্জু ভাইয়ের বন্ধু সাংবাদিক কারো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল ভাইয়ের সঙ্গে ভাবি ফোনে যোগাযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুদান সাহায্যের জন্য একটি দরখাস্ত চেয়েছেন হেলাল ভাই। কিভাবে লিখবেন দরখাস্তটা? ফোনে রঞ্জু ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্তের সহযোগিতা কামনা করেন ভাবি। স্বপন বাবু ভাবি ভালো লিখতে পারেন এই অজুহাত দিয়ে সামান্যতম এ সহযোগিতার হাতটি গুটিয়ে নেন। ২০ এপ্রিল ভাবি ম্যাসেঞ্জার কলে আমাকে অনুরোধ করেন আবেদনপত্রটি লিখে দিতে। বাসায় ল্যাপটপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সৎ মানুষ রঞ্জু ভাইয়ের চিকিৎসা ব্যয়ের খতিয়ান বিবরণ এবং খোন্দকার মোহিতুল ইসলামের উজ্জ্বলময় বর্ণাঢ্য পেশা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সংক্ষেপে লেখা আবেদন পত্রটির খসড়া ভাবির ম্যাসেঞ্জারে প্রেরণ করি সেদিন রাতে। পরদিন খবর নিয়ে জানি হেলাল ভাই জানিয়েছেন করোনার সংকট মুক্তির পর দরখাস্ত দিতে। ব্যক্তিগতভাবে হেলাল ভাই রঞ্জু ভাইয়ের জন্য এক লাখ টাকা দিয়েছেন বলে ভাবি জানান।

পরে আর সরাসরি যোগাযোগ হয়নি ভাবির সঙ্গে। ফেবুতে তিনি সুরা লিখে তা উচ্চারণের মাধ্যমে বন্ধুদের কাছে রঞ্জু ভাইয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। কাল রাত সাড়ে ৯টায় কানাডা প্রবাসী ফেসবুক বন্ধু রুশদীর দেয়া পোস্ট থেকে রঞ্জু ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা পাই। খবরটা পড়ে আমার বুক ধড়ফড় ও শরীর কাঁপতে থাকে। ঘামছি তো ঘামছিই! কাছের মানুষের মৃত্যুর শোক সংবাদে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।

সকালে পাই দেশের সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ, দুপুরে করোনা আক্রান্ত খোকনের অসুস্থতার খবরটি। রাতের মধ্যে একই দিনে পরিচিত তিনজনের পৃথিবী প্রস্থানের বিয়োগ সংবাদে মুষড়ে পড়ি।
একেবারে চলে যাওয়া দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকনের সঙ্গে পরিচয় আমার ২০০৬ সালে। সম্পাদক নাঈমুর ইসলাম খানের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত দৈনিক আমাদের সময় এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক দীনেশ দাশের সরাসরি সহকর্মী ও বন্ধু ছিলেন খোকন। চাকরি ছিলো না দীনেশের। রাজধানীর কাকরাইল চার্চের কাছে দুঃচিন্তায় হোণ্ডা আরোহী সাংবাদিক দীনেশ দাসের বাস দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর পর ওর পরিবারকে সহযোগিতার বিষয়ে খোকনের সঙ্গে আমার সম্পর্কের উন্নতি হয়। খোকনের মতো আমিও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য। উত্তরার সন্নিকটে পুলারটেকে অবস্থিত আমাদের প্রকল্প রিপোর্টার্স ভিলেজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের নানা অনুষ্ঠানে পরিবারগতভাবেও সাক্ষাৎ হয় খোকনের সঙ্গে। তাছাড়া ওর সহধর্মিণী শারমিন সুলতানা রীনা আমার মতো কবিতাপ্রেমী! রীনা ভাবির সঙ্গে সাহিত্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয় এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দু'জনের লেখাও প্রকাশ হয়। সে কারণে খোকনের সঙ্গে হৃদ্যতা গভীর হয়। ওর সজীব হাসি সবসময় লক্ষ্য করতাম। কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন কবির খোকন সংগঠনের তহবিল গঠনের জন্য অগ্রজ হিসেবে আমার সহযোগিতাও চেয়েছিলেন। কুমিল্লার বড় বড় ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর সংগ্রহ করে ওকে দিয়েছিলাম। আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক এবং ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা নঈম নিজামের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু বিরাজমান সংকটের কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

মৃত্যুর মিছিল দেশেও বড় হচ্ছে। দেশের ভালো ও প্রজ্ঞাবান মানুষগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছেন চিরতরে। এই মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক নয় মোটেও। ডিজিটাল বাংলাদেশের আন্তরিকতাশূণ্য এনালগ সেবা, সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা, অতি মুনাফালোভী চিকিৎসালয়ের অপশাসনই এর জন্য দায়ী। এরমধ্যে চলেছে করোনা জীবাণুর মরণকাল! লেখাটার শেষে এসেও মনে হচ্ছে সৃষ্ট সমস্যার পাহাড়ে থাকা আমিও সেই অনাকাংখিত মৃত্যুর মিছিলে শিগগিরই সামিল হবো। হয়তো এটাই আমার শেষ লেখা! মৃত্যু নৃপতি বুঝি আমার গৃহের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছেন!

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
[email protected]

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর